ওমর ফারুক

প্রকাশিত: ৮ এপ্রিল, ২০২৪, ০১:৩৫ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

ঈদ যাত্রা হোক নিরাপদ ও আনন্দময়

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

এক. 

ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দের এক অবিচ্ছেদ্য মেল বন্ধন। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় আনন্দ উৎসব হলো বছরে দুই ঈদ, পবিত্র ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা।

আর মাত্র কয়েকদিন পরই উদযাপিত হবে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের একটি পবিত্র ঈদুল ফিতর। দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর মুমিন-মুসলমানের দরজায়ে বর্নিল আনন্দের বার্তা নিয়ে হাজির হয় ঈদ।

এই দিনটি ভ্রাতৃত্ব, বন্ধুত্ব, সহমর্মিতা ও ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাইকে এককাতারে শামিল করার চেতনায় উজ্জীবিত করে। বুকে বুক মিলিয়ে ধনী-গরিবের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সবাইকে সমান কারাতে নিয়ে আসে।

ঈদ আসলেই নাড়ীর টানে, প্রিয় মানুষদের কাছে ছুটে চলে মানুষ। বিশেষ করে যারা ইট কাঠের এই নাগরিক জীবনে বসবাস করেন তারা একটু স্বস্তির জন্য, একটু শান্তির জন্য, প্রিয় মানুষগুলোর সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য ছুটে যায় গ্রামে। যে গ্রামের ধুলো মেখে সে বড় হয়েছে। এটাই আমাদের ঈদের অন্যতম ঐতিহ্য। 

কিন্তু এই যাত্রায় সাধারণ যাত্রীদের পড়তে হয় নানা ভোগান্তীতে। সড়ক দূর্ঘটনা, ছিনতাই, বিভিন্ন ঠকবাজ পার্টির খপ্পরে পরে মানুষকে হতে হয় সর্বস্বান্ত ।

দুই. 

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ইতিমধ্যেই  থেকে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। আগামী কয়েকদিন সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ থাকবে। কয়েকদিন ধরে গরমে এমনিতেই মানুষ হাঁসফাঁস করছে। এ অবস্থায় মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হলে মানুষের দুর্ভোগের আর সীমা পরিসীমা থাকবে না। কাজেই মহাসড়কে যাতে যানজটের কারণে মানুষের দুর্ভোগ না বাড়ে, সেজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবার রেলপথে শিডিউল বিপর্যয় ছাড়াই বাড়ি যাচ্ছেন যাত্রীরা। রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। সদরঘাটে ঢাকা নদীবন্দরে নৌপথেও বেড়েছে যাত্রী। বঙ্গবন্ধু সেতুতে আগের চেয়ে যানবাহনের চাপ অনেক বেশি। পদ্মাসেতুর টোল প্লাজায়ও দীর্ঘ গাড়ীর সারি। 

ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে উদযাপনের লক্ষ্যে দেশের নাগরিকদের জন্য বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।

তার মধ্যে আছে-

* ভ্রমণকালে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় রাখা। 

* জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে বাসের ছাদে কিংবা ট্রাক, পিকআপ ও অন্যান্য পণ্যবাহী যানবাহনে ভ্রমণ না করা। 

* রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে জেব্রা ক্রসিং অথবা ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করা।

দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের এক প্রতিবেদনে দেখলাম,  আসন্ন ঈদুল ফিতরে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি রোধে ত্রুটিপূর্ণ ও রুট পারমিটবিহীন বাসসহ সব ধরনের অবৈধ যানবাহন এবং লাইসেন্সবিহীন চালকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার দাবি জানিয়েছে নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি।

কিন্তু এত এত পদক্ষেপের কি বাস্তবায়ন হবে?  নিরাপদে বাড়ি ফেরার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে ? গনপরিবহনের মালিক কিংবা সাধারণ যাত্রী কি মেনে চলবে  আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর এই নির্দেশ? 

প্রতিবারই তো এরকম নির্দেশনা আসে তারপরও সড়কে ঝড়ে যায় কতশত তাজা প্রান। আনন্দ পরিনত হয় বিষাদে। 

এর অন্যতম প্রধান কারণ আমারা কেউই আসলে আইনের তোয়াক্কা করি না। যাত্রীদের চিন্তা কত দ্রুত বাড়ি ফেরা যায়। আর গনপরিবহন মালিকদের চিন্তা ঈদকে ঘিরে কত টাকা ব্যবসা করা যায়। এই মনোভবে থেকে আমরা যতদিন বের হয়ে আসতে না পাবরো ততদিন ঈদ যাত্রা কখনই স্বস্তির হবে না। 

তিন.

প্রকৃতপক্ষে  সুষ্ঠু যানবাহন ব্যবস্থাপনা, সড়কে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা এবং বাড়তি আয়োজন গ্রহণ সেই সাথে সাধারণ মানুষের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়ার মাধ্যমেই মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসবকে সবার জন্যই আনন্দময় করে তোলা সম্ভব। 

ঈদযাত্রায় সবাই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিলেই কেবল ঈদের আনন্দ নিরানন্দ হতে পারবে না। 

ঈদ উৎসব সবার মধ্যে ছড়িয়ে যাক। পারস্পরিক মেলবন্ধন তৈরি হোক পবিত্র ঈদকে ঘিরে। এই সুন্দর মুহূর্তের আনন্দ, অনুভূতি, মায়া, ভালোবাসা ছড়িয়ে যাক হৃদয় থেকে হৃদয়ে সারাদেশে। সবাইকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগাম শুভেচ্ছা। 

লেখক : দৈনিক রূপালী বাংলাদেশের যুগ্ম বার্তা সম্পাদক ও গীতিকবি। 

 

মন্তব্য করুন