লাইফস্টাইল ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ০৩:১৬ এ এম

অনলাইন সংস্করণ

পোষা প্রাণীর যত্ন নেবেন যেভাবে

ছবি সংগৃহীত

শখ করে প্রাণী পোষাটা যেন একটা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহুরের বদ্ধ বাড়িতেও তাই শখের পোষ্য হেসেখেলে বড় হচ্ছেন পরিবারের সদস্যের মতো।

গ্রাম বা মফস্বলের খোলামেলা পরিবেশে পশুপাখি পালন যতটা সহজ, আধুনিক ধারার ফ্ল্যাট বাড়িতে সেটা ততটাই কঠিন। আবদ্ধ জায়গায় প্রাণীদের পালতে হলে চাই বাড়তি যত্ন  বিশেষ খেয়াল।

সময়মতো খাবার দেওয়া, প্রয়োজনে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া, মলমূত্র পরিষ্কার করে দেওয়া—এ যেন সন্তান পালনের মতো গুরুদায়িত্ব। ছোট প্রাণী (যেমন: বিড়াল) পালতে হলে বাসায় নেট লাগিয়ে নিতে হবে, যাতে জানালা বা বারান্দা (এমনকি বাথরুমের জানালা) দিয়ে পড়ে না যায়।


সম্প্রতি অভিনেত্রী পূজা চেরির অরিও (বিড়াল) কিন্তু চারতলা থেকে পড়েই মারা গেছে। খরগোশ পালতে হলেও নেট লাগিয়ে নিতে হবে। আবদ্ধ জায়গায় সঙ্গীবিহীন প্রাণী পালতে হলে (কিংবা জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে হলে) প্রাণীটিকে অস্ত্রোপচার করিয়ে নেওয়া দরকার হয়। অস্ত্রোপচার–পরবর্তী যত্নআত্তিও আলাদা। তা ছাড়া সমাজ, আত্মীয়স্বজন, এমনকি পরিবারের সব সদস্যও একই মানসিকতার হন না। পোষা প্রাণী নিয়ে প্রতিবেশী কিংবা বাড়িওয়ালার সঙ্গে মনোমালিন্য হতেই পারে, পরিবারের ভেতরেও সৃষ্টি হতে পারে মান অভিমান। প্রাণী পালন করতে হলে নেতিবাচক বিষয়গুলো খুবই যত্নের সঙ্গে, মাথা ঠান্ডা রেখে মোকাবিলা করতে হয়।


যত্ন যেমন হওয়া চাই


কোনো প্রাণীকে পালতে চাইলে নিকটস্থ প্রাণী চিকিৎসাকেন্দ্রে কথা বলে প্রাণী চিকিৎসকের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নেওয়া ভালো। মাছ, পাখি, কচ্ছপ, কুকুর, বিড়াল—প্রতিটি প্রাণীর যত্নের নিয়ম ভিন্ন। বিড়াল, কুকুর ও খরগোশের যত্ন প্রসঙ্গে প্রাণী গবেষক ও চিকিৎসকদেের বেশ কিছু নির্দেশনা রয়েছে।


বিষয়গুলো হলো-

▪ বিড়াল ও কুকুর মূলত আমিষজাতীয় খাবার খায়। অন্য কিছু না দিলেও চলে। মাছ, মাংস এবং খানিকটা ডিম দিতে পারেন। সামান্য সবজি সেদ্ধ করে (মিষ্টিকুমড়া, আলু, গাজর, পেঁপে) এগুলোর সঙ্গে মিশিয়েও দিতে পারেন। দিতে পারেন সামান্য ভাতও। কিছু বিদেশি কুকুরকে বাড়তি ক্যালসিয়াম দিতে হয়। খরগোশকে পালংশাক, ধনেপাতা, লেটুসপাতা, টমেটো, শসা, গাজর, কাঁচা ঘাস, শুকনা খড় দিতে পারেন। বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের প্রাণীর বিভিন্ন খাবার কিনতেও পাওয়া যায়। রাজধানীতে অনেকগুলো এলাকায় পেট শপ গড়ে উঠেছে। সেখানে গেলেও খাবার কিনতে পারবেন।

▪ প্রাণীর পানির পাত্রের পানি বদলে দিন নিয়মিত। শুষ্ক আবহাওয়ায় ঢেলে রাখা পানি দ্রুত গরম হয়ে যায়, পানিতে ধুলা–ময়লাও পড়তে পারে যেকোনো সময়। খাবার ও পানি রাখার জন্য ভালো মানের পাত্র বেছে নিন। ময়লা পড়লে পানি বদলে দিন। পোষ্য খাবে ভেবে অপরিচ্ছন্নভাবে খাবার দিলে সে অসুস্থ হয়ে পড়বে।

▪ ছোটবেলা থেকে মায়ের দুধ ছাড়া অন্য দুধে অভ্যস্ত না হয়ে থাকলে প্রাণীদের বাইরের দুধ দেবেন না। এতে পেটের পীড়া হতে পারে। চকলেট, চা-কফি, পেঁয়াজ বিড়াল-কুকুরের জন্য ক্ষতিকর। বিড়াল-কুকুরের খাবারে লবণ দিলে সেটিও হবে খুব সামান্য। মসলা ছাড়াই রান্না করুন বিড়াল-কুকুরের খাবার।

▪ বিড়াল-কুকুরকে নিয়মিত গোসল করান। ওদের জন্য বিশেষ শ্যাম্পু কিনতে পাওয়া যায়, সেটি ব্যবহার করুন।

▪ পোষ্যকে সময় দিন, ওদের সঙ্গে খেলুন। তাহলে সে দ্রুত আপনার অনুগত হয়ে যাবে।

▪ বিড়ালের জন্য নখ ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। বিড়ালের নখ না কাটাই ভালো। তবে বাসার অন্যদের নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেকে বিড়ালের নখ কেটে থাকেন। কাটতে হলেও কাটুন কেবল নখের অগ্রভাগ (সামান্য অংশ)। কুকুর আর খরগোশের নখের সামান্য অংশ কেটে দেওয়া যেতে পারে। প্রাণীর নখ কাটতে প্রয়োজনে পেশাদার ব্যক্তির সহায়তা নিতে পারেন। লম্বা লোমের জন্য গরমে প্রাণীটি কষ্ট পেলে (বিদেশি প্রাণীর ক্ষেত্রে) পেশাদার হাতে লোমও ছাঁটিয়ে নিতে পারেন। প্রাণী চিকিৎসকের সহকারীরা অনেক ক্ষেত্রেই দক্ষতার সঙ্গে এই কাজগুলো করে থাকেন । রাজধানীর বনানীতে পেট পারলার আছে। সেখানে গেলেও প্রাণীর নানা ধরনের সেবা নিতে পারবেন।

▪ দুই মাস বয়সেই বিড়াল ও কুকুরকে জীবাণুর সংক্রমণরোধী টিকা দিন। এক মাস পর বুস্টার ডোজ দিয়ে নেওয়া ভালো। এ ছাড়া তিন মাস পূর্ণ হলে অবশ্যই জলাতঙ্কের টিকা দিয়ে নেবেন। এরপর প্রতিবছর নিয়ম করে টিকাগুলো দিন।

▪ তিন মাস অন্তর বিড়াল-কুকুরকে কৃমির ওষুধ দিন, খরগোশকে দিন ছয় মাস অন্তর।

 

চিকিৎসাসেবা

আমরা যেমন অসুস্থ হই, তেমনি পোষ্যরাও অসুস্থ হয়ে থাকে। ওদেরও প্রয়োজন চিকিৎসা এবং আন্তরিক সেবা। ঢাকার অদূরে পূর্বাচলে রয়েছে টিচিং ও ট্রেনিং পেট হাসপাতাল ও গবেষণাকেন্দ্র। মাইক্রোস্কপিক পরীক্ষা এবং রক্ত পরীক্ষা তো বটেই, এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রামের মতো পরীক্ষা করানোর সুবিধাও সেখানে রয়েছে।

ধানমন্ডি, লালমাটিয়া, গুলশান-বাড্ডা সংযোগ সড়ক ও মিরপুর এলাকায় রয়েছে প্রাণীদের ক্লিনিক। এর মধ্যে লালমাটিয়া ও মিরপুরে রয়েছে পেট লাইফ কেয়ার ক্লিনিকের শাখা, যেখানে তুলনামূলক কম খরচে সেবা পাওয়া যায়। সীমিত আয়ের মানুষের আদরের প্রাণীর সেবাও সেখানে মেলে। সামর্থ্যবান ব্যক্তিরাও সেখানে সেবা নিয়ে থাকেন, খরচের একটা অংশ ব্যয় করা হয় অসহায় প্রাণীদের আশ্রয়কেন্দ্রের জন্য।

মন্তব্য করুন