বগুড়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল, ২০২৪, ০৬:০১ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

বগুড়ায় সাতজনের আত্মহত্যা, নেপথ্যে কলহ-নির্যাতন

ছবি সংগৃহীত

বগুড়ায় সাত দিনের ব্যবধানে দুই গৃহবধু ও কিশোরীসহ চারজন আত্মহত্যা করেছে। ঘটনাগুলোর নেপথ্যের কারণ ছিল পারিবারিক কলহ, নির্যাতন ও অভিমান। এ সব ঘটনায় ইউডি মামলা (অপমৃত্যু) দায়ের করা হয়েছে।

নন্দীগ্রাম উপজেলায় চারজন, শিবগঞ্জ উপজেলায় একজন, কাহালু উপজেলায় একজন ও আদমদীঘি উপজেলার একজনের আত্মহত্যার তথ্য পাওয়া গেছে।

রোববার (১৪ এপ্রিল) সকালে নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটগ্রাম ইউনিয়নের কুন্দারহাট সড়কপাড়া এলাকায় স্বামীর সাথে ঝগড়ার পর বাড়ির পেছনে গিয়ে গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে গৃহবধু মুন্নি আকতার (২০) গুরুতর অসুস্থ হয়। তাকে উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওইদিন দুপুরে তার মৃত্যু হয়। নিহত মুন্নি ভাটগ্রাম ইউনিয়নের বিশা গ্রামের মন্টু মিয়ার কন্যা। নিনগ্রামের মজনু মিয়ার ছেলে সবুজ হোসেনের সঙ্গে মুন্নির প্রায় ৫বছর পূর্বে গোপনে বাল্য বিয়ে হয়। সংসার জীবনে তাদের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। মুন্নির বাবা মন্টু মিয়া প্রবাস থেকে ফিরে কুন্দারহাট সড়কপাড়ায় বসবাস করেন। মুন্নি তার স্বামীর সঙ্গে ওই এলাকাতেই থাকতো। তুচ্ছ ঘটনায় সংসারে অশান্তির কারণে মাঝেমধ্যেই স্ত্রীকে নির্যাতন করতো স্বামী সবুজ। এনিয়ে একাধিকবার পারিবারিক ও এলাকায় সালিশ বৈঠক হয়েছে। স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে ওই গৃহবধু আত্মহত্যা করে বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা।

বগুড়া সদর থানার এসআই জহুরুল ইসলাম জানান, গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নারীর মৃত্যুর ঘটনায় সদর জিডি করা হয়েছে। মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শনিবার (১৩ এপ্রিল) শিবগঞ্জ উপজেলার পিরব ইউনিয়নের বকঠোঁটা দেহরাপাড়া গ্রামে গলায় রশি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন বুলি বেওয়া (৬৫) নামের বৃদ্ধা। তিনি ওই গ্রামের মৃত জমির উদ্দিনের স্ত্রী। স্বামী মারা যাওয়ার পর কোনো সন্তানের সংসারে থাকেননি বুলি বেওয়া। নিজেই আলাদা রান্না করে খেতেন। ঈদ উপলক্ষ্যে মা বুলি বেওয়াকে আধা কেজি গরুর মাংস কিনে দেয় ছেলে বুলু মিয়া। মাকে মাংস কিনে দেওয়া নিয়ে স্বামীকে বকাঝকা করেন পুত্রবধু রাজিয়া সুলতানা। এনিয়ে বউ-শাশুড়ির ঝগড়া হয়।

শিবগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) জিল্লুর রহমান জানান, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। এ ব্যাপারে থানায় একটি ইউডি মামলা হয়েছে।

অন্যদিকে রোববার (১৪ এপ্রিল) নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল ইউনিয়নের দাসগ্রাম সোনারপাড়া এলাকায় সজনে গাছে ফাঁস দেওয়া ঝুলন্ত অবস্থায় হজরত আলী (৫৬) নামের বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনি ওই এলাকার মৃত আফজাল হোসেনের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, দাসগ্রাম বাজারে ওই বৃদ্ধের মসলার দোকান রয়েছে। সম্প্রতি জমিজমা লিখে দেওয়ার জন্য বৃদ্ধ হজরত আলীকে দফায় দফায় চাপ দেয় ছেলে আরিফুল। এনিয়ে শনিবার রাতে পিতা-পুত্রের ঝগড়া হয়। রোববার সকালে নিজ বাড়ির সামনে সজনে গাছে বৃদ্ধের ঝুলন্ত মরদেহ দেখে পুলিশে খবর দেওয়া হয়।

এছাড়া ঈদের দিন গত ১১ এপ্রিল ভাটরা ইউনিয়নের মাটিহাঁস গ্রামে পারিবারিক কলহ ও স্বামী-সতীনের নির্যাতনে খালেদা আক্তার (৩৫) নামের এক গৃহবধুর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে। বসতবাড়ির শয়ন ঘরে গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে তার মৃত্যু হয় বলে ইউডি মামলায় উল্লেখ করা হয়। নিহত খালেদা এক পুত্র সন্তানের জননী ও মাটিহাঁস গ্রামের মৃত খোরশেদ আলমের কন্যা। স্ত্রীর অজান্তে গত ৭ মাসপূর্বে দ্বিতীয় বিবাহ করে স্বামী হামিদুল। এনিয়ে পরিবারে অশান্তি শুরু হয়।

গত ১০ এপ্রিল আদমদীঘি উপজেলার নসরতপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে চাঁদনী খাতুন (১৩) নামের স্কুলছাত্রী গলায় ওড়নার পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। সে বিষ্ণুপুর গ্রামের প্রবাসী চান মিয়ার কন্যা। চাঁদনী খাতুন মোবাইল ফোন চাইলে তার মা শাসন করে। এই অভিমানে সে আত্মহত্যা করে।  আদমদীঘি থানার ওসি রাজেশ কুমার চক্রবর্তী জানান, এ ঘটনায় থানায় ইউডি মামলা হয়েছে।

৯ এপ্রিল কাহালু পৌরসভার উলট্ট পূর্বপাড়া এলাকায় চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আবু মুসা (৪০) আত্মহত্যা করেন। নিহত ব্যক্তি কাহালু উপজেলার মালঞ্চ হাটুরপাড়া এলাকার মইন উদ্দিনের ছেলে। তিনি কাহালুর দুর্গাপুর এনায়েতুল্লাহ মাদরাসার দপ্তরি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

কাহালু থানার ওসি সেলিম রেজা জানান, সান্তাহার থেকে ছেড়ে আসা বগুড়াগামী দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস যখন কাহালুর উলট্ট পার হচ্ছিল তখন মুসা ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দেন। ঘটনাস্থলেই তার দেহ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে জেনেছি মুসা ব্যক্তিগত কারণে মানসিক চাপে ছিলেন।
গত ৭ এপ্রিল নন্দীগ্রাম উপজেলার থালতা-মাঝগ্রাম ইউনিয়নের হরিহারা গ্রামে নিজ শয়ন ঘরের তীরের সাথে গলায় রশি পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে মোর্শেদা বেগম (৪৫)। তিনি ওই গ্রামের আব্দুর রহমান বাবুর স্ত্রী। ২০২০ সালে ছেলে মশিউর রহমান বিদ্যুৎ আত্মহত্যার পর শোকে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন মা মোর্শেদা।

নন্দীগ্রাম থানার ওসি আজমগীর হোসাইন আজম জানান, পৃথক আত্মহত্যার ঘটনায় ইউডি মামলা দায়ের হয়েছে। উপজেলায় আত্মহত্যার প্রবনতা রোধে পারিবারিক সচেতনতা বাড়াতে নিয়মিত সচেতনতামূলক সভার কার্যক্রমকে আরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

মন্তব্য করুন