ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২ মার্চ, ২০২৪, ০৩:১২ এ এম

অনলাইন সংস্করণ

রোজাদারের জন্য যেসব সুসংবাদ দিয়েছেন বিশ্বনবী

তাকওয়া বা আল্লাহর ভয় অর্জনের এ মোবারক মাসে মুমিন মুসলমানের ওপর অর্পিত হয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। সৃষ্টি হয়েছে নেক বা পূণ্য অর্জনের বিশাল সুযোগ। প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণে নিজেদের চরিত্রকে সুন্দর করার প্রশিক্ষণের এক মহা নেয়ামতের মাস এ রমজান।

মুমিন মুসলমানের করণীয় হলো আল্লাহ তাআলা কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে প্রবৃত্তির অধঃপতন থেকে নিজেদের চারিত্রিক উন্নতি ও ঝিমিয়ে পড়া চেতনাকে জাগ্রত করার পাশাপাশি কুরআনের সুমহান হেদায়েতের মাধ্যমে নিজেদের তৈরি করা।

বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ মাসে রোজাদারের জন্য অনেক সুসংবাদ ঘোষণা করেছেন। যার অনেকই আমাদের অজানা। আর জানা থাকলেও তা মানার আগ্রহ উদ্দীপনা অনুপস্থিত। হাদিসের ঘোষিত সেসব সুসংবাদগুলো হলো-

>> দোয়া কবুল হওয়াপ্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘(রমজানের) প্রতি দিন ও রাতে (জাহান্নাম থেকে) আল্লাহর কাছে অনেক বান্দা মুক্তিপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। তাদের প্রত্যেক বান্দার দোয়া কবুল হয়ে থাকে (যা সে রমজান মাসে করে থাকে)’ (মুসনাদে আহমদ)

>> রোজাদারের পুরস্কারহাদিসে কুদসিতে বিশ্বনবি বর্ণনা করেন, আল্লাহ তাআলা বলেন-‘বনি আদমের সব আমল তার জন্য, অবশ্য রোজার কথা আলাদা, কেননা রোজা আমার জন্য এবং আমিই এর পুরস্কার দেব।’ (বুখারি ও মুসলিম)

আরও পড়ুন > সালাতুত তাসবিহ পড়বেন যেভাবে

>> গোনাহের কাফফারারোজা মুমিন বান্দার গোনাহের কাফফারা এবং তা থেকে ক্ষমা লাভের কারণ। হাদিসে এসেছে-‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের আশায় রমজান মাসে রোজা রাখবে তার আগের জীবনের সব গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

>> রাইয়ান জান্নাতমুমিনদের জন্য জান্নাত লাভের পথ রোজা। রোজাদারের জন্য রয়েছে সুনির্দিষ্ট জান্নাত। যেখানে অন্য কেউ যেতে পারবে না। হাদিসে এসেছে-‘জান্নাতের একটি দরজা আছে, যাকে বলা হয় ‘রাইয়ান’। কেয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে রোজাদারগণই প্রবেশ করবে। অন্য কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। বলা হবে রোজাদাররা কোথায়? অতঃপর রোজাদাররা এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে থাকবে। যখন রোজাদারদের সর্বশেষ ব্যক্তি প্রবেশ করবে তখন এ দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। অতঃপর তা আর কারো জন্য খোলা হবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)

>> রোজা শাফায়াতকারীরমজান মাসে রোজা পালনকারীর জন্য কেয়ামতের দিন এ রোজা আল্লাহর কাছে নাজাতের জন্য শাফায়াত করবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-‘রোজা এবং কুরআন কেয়ামতের দিন বান্দার জন্য শাফায়াত করবে। রোজা বলবে, হে আমাদের প্রভু! আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও কামনা চরিতার্থ করা থেকে নিবৃত্ত রেখেছি। অতএব তার ব্যাপারে আমাকে শাফায়াত করার অনুমতি দিন। অতঃপর আল্লাহ রোজা এবং কুরআনকে শাফায়াতের অনুমতি দেবেন। তারা রোজাদারের জন্য শাফায়াত করবে।’ (মুসনাদে আহমত, মুসতাদরাকে হাকেম)

>> মুখে মেশকের সুঘ্রাণসারাদিন খাওয়া-দাওয়া থেকে বিরত থাকার করণে মুখে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। যা আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়েও সুঘ্রাণ। হাদিসে এসেছে-‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ, তার শপথ! রোজাদারের মুখের গন্ধ কেয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে মেশকের চেয়েও বেশি সুগন্ধিময় হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

>> খুশির সময়রোজাদার বান্দার জন্য দুটি খুশির সময়ের ঘোষণা এসেছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-‘রোজাদারের জন্য দুটো খুশির সময় আছে। একটি হলো ইফতারের সময় এবং অন্যটি স্বীয় প্রভু আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।’ (বুখারি ও মুসলিম)

>> জাহান্নামের ঢালরোজা মুমিন মুসলমানের জন্য জাহান্নামের ঢালস্বরূপ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একদিন রোজা রাখে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে নিয়ে যান।’ (বুখারি ও মুসলিম)

অন্য বর্ণনায় এসেছে-‘রোজা ঢালস্বরূপ। যা দ্বারা বান্দা নিজেকে আল্লাহর আজাব থেকে রক্ষা করতে পারে। যেভাবে তোমাদের কেউ নিজেকে যুদ্ধে রক্ষা করে।’ (মুসনাদে আহমাদ)

এছাড়াও রোজার জানা-অজানা অনেক ফজিলত ও উপকারিতা রয়েছে। রোজায় মানুষের মধ্যে আল্লাহর বিশেষ ৩টি গুণ ফুটে ওঠে।>> কম ঘুমানো।>> কম খাওয়া এবং>> কম কথা বলা।

রোজায় মানুষের মাঝে দৃঢ়তার সৃষ্টি হয়। চারিত্রিক মাধুর্য ফুটে ওঠে। শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি তৈরি হয়। এ রোজায় মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার নির্দশন ফুঠে ওঠে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রোজা পালনের মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালে উল্লেখিত সুসংবাদগুলো লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

মন্তব্য করুন