বেরোবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৬ মে, ২০২৪, ১২:৫২ এ এম

অনলাইন সংস্করণ

সাংবাদিকতা বিভাগে বিভাগীয় প্রধান নিয়োগের দাবি বেরোবি শিক্ষার্থীদের

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিভাগীয় প্রধান নিয়োগের দাবিতে আন্দোলন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী।

প্রায় দুই মাস হতে বিভাগীয় প্রধান শুন্য হয়ে আছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ। ফলে প্রায় অচল হয়ে পড়েছে বিভাগটি। প্রশাসনিক ক্লাস-পরীক্ষার সাথে সাথে বন্ধ হয়ে আছে প্রশাসনিক কাজকর্মও। এ অবস্থায় আইন অনুযায়ী বিভাগীয় প্রধান নিয়োগের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে বিভাগের শিক্ষার্থীবৃন্দ। 


রবিবার দুপুর ১২ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক হাসিবুর রশীদ তাঁর দপ্তরে আসেন নি।


জানা গেছে, বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ নজরুল ইসলাম গত ১০ মার্চ বিভাগীয় প্রধান হিসেবে তাঁর দায়িত্বের মেয়াদ শেষ করেন।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর আইন ২০০৯ এর ধারা-২৮(৩) অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পালাক্রম অনুযায়ী 'বিভাগীয় প্রধান' হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার কথা বিভাগের অপর সহযোগী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধানের। কিন্তু তা না করে সহকারী অধ্যাপক নিয়ামুন নাহারকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব প্রদান করে কর্তৃপক্ষ। নিয়ামুন নাহার উক্ত পদে যোগদান করতে অস্বীকৃতি জানালে দ্বিতীয়বার আইন লঙ্ঘন করে অপর জুনিয়র সহকারী অধ্যাপক সারোয়ার আহমাদকে নিয়োগ দেয়া হয়, তিনিও যোগদান করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এর পর আবারও আইন লঙ্ঘন করে অপর জুনিয়র সহকারী অধ্যাপক মোঃ রহমতুল্লাহ কে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তিনিও দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানালে গত ১০ মার্চ থেকে বিভাগীয় প্রধান শুন্য হয়ে আছে বিভাগটি। এর ফলে বিভাগের সকল কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়েছে। ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ থাকায় আইন অনুযায়ী তাবিউর রহমান প্রধানকে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব প্রদানের জন্য আন্দোলন শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। সোমবারের মধ্যে আইন অনুযায়ী বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ করা না হলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। 


শিক্ষার্থীদের দাবি, আইন অনুযায়ী জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব প্রদান করে বিভাগের কার্যক্রম দ্রত সচল করা হোক।

রবিবার আন্দোলন চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা, ছাত্র উপাদেষ্টা এবং অন্যান্যরা সমস্যা সমাধানের জন্য সাত দিন সময় চাইলে শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্য নাকচ করে দেয়। শিক্ষার্থীরা বলেন, গত দুই মাস থেকে বিভাগ অচল হয়ে আছে আর এখন সাত দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হবে এটা আমরা বিশ্বাস করি না।


আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে জান্নাত সৃষ্টি বলেন, গত দুই মাস ধরে আমাদের বিভাগে বিভাগীয় প্রধান না থাকায় যে সংকটের সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসনে আমরা বিভাগের সকল শিক্ষার্থী বেলা ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছি। আমরা ভিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে ভিসি স্যার আমাদের সঙ্গে দেখা করেননি। এমতাবস্থায় প্রশাসনের কাছে আমাদের একটাই দাবি, আর তা হলো অবিলম্বে আমাদের বিভাগে বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ দেওয়া।


এ সময় বিক্ষোভরত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর বেল্লাল উদ্দিন শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে বলেন, সমস্যাটি সম্পর্কে প্রশাসন অবগত আছে। সমস্যা নিরসনের জন্য গঠিত হওয়া কমিটি বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। আশা করি আগামী সাত দিনের মধ্যে আপনারা একটি সমাধান পাবেন।


এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (অর্থ ও হিসাব), সমস্যা নিরসন কমিটির সদস্য এবং গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আরএম হাফিজুর রহমান বলেন, এ সমস্যা নিরসনে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভাগের বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কমিটি পৃথক পৃথকভাবে কথা বলেছে। এর মাঝে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়ে যাওয়ায় কমিটি কাজ ঠিকভাবে করতে পারেনি। এখন আমরা আবার কাজ শুরু করেছি্। আশা করা যায়, সাতদিনের মধ্যেই আমরা এ সমস্যার সমাধান করতে পারব।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নিয়োগের বিষয়ে রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মুহম্মদ আলমগীর চৌধুরী বলেন, আইনগত জটিলতা থাকায় বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। আইনগত কী জটিলতা এ বিষয়ে পরিষ্কার করে তিনি কিছু বলতে পারেন নি। তবে এ সংক্রান্ত একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি। কমিটির প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 


সার্বিক বিষয়ে কথা বলার জন্য উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদকে বার বার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেন নি। সারাদিন দপ্তরে না আসায় তাঁর সাক্ষাতও পাওয়া যায় নি।

মন্তব্য করুন