নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

প্রকাশিত: ৪ জুলাই, ২০২৪, ০৯:৪৩ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

রাজশাহীতে বিক্রি হচ্ছে অসুস্থ গরুর মাংস স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে জনগণ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার বানিজ্যিক জোন খ্যাত কেশরহাট বাজারে নিয়মিত বিক্রি হচ্ছে অসুস্থ গরুর মাংস। যার কারনে চরম স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়ছে  জনগণ। এবাজারের বড় মাংস বিক্রেতা কসাই কাদের। দুই-দুইবার হজ্ব করে তকমা লাগিয়েছেন ডাবল হাজির। অভিযোগ উঠেছে, এই কসাই কাদের এলাকার বাইরে থেকে নিয়মিত অসুস্থ গরু পানির দামে কিনে তা জবাই করে চড়া দামে বিক্রি করেন হোটেল ব্যবসায়ীদের কাছে। এসবই করেন রাতের আধারে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে মরা গরুর মাংস বিক্রিরও অভিযোগ উঠেছে। কেশরহাট বাজারে গরুর মাংসের কালাভুনা বিক্রির দোকান রয়েছে ১৫/২০টি। প্রায় সবকটি কালাভুনা বিক্রেতা কসাই কাদেরের কাছ থেকে মাংস কেনেন। গত ৩ জুলাই রাতে সরেজমিনে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। যার একাধিক ভিডিও, অডিও ফুটেজ রয়েছে সংরক্ষিত রয়েছে প্রতিবেদকের কাছে।  

ভিডিও ফুটেজে কসাই কাদেরের কর্মচারী বাবুল হোসেন এ চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন। আরো অভিযোগ রয়েছে, কসাই কাদের কেশরহাট পৌর মেয়র শহিদুজ্জামান শহিদের ভাই পরিচয় দেয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সাহস পাইনা কেউ। এমন মন্তব্য করেছেন উপজেলা স্যানিটারী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান। এছাড়াও অদৃশ্য ক্ষমতার দাপটে তিনি এই অপকর্মে জড়িয়ে রয়েছেন বলে জানা গেছে। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ গরুর মাংস বিক্রির ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। অভিযুক্ত কসাই কাদের হাজি (৬০)কেশরহাট পৌর হরিদাগাছি গ্রামের মৃত কলিমদ্দিনের ছেলে। 

সরেজমিনে দেখা গেছে, একটি গাভী গরু  অসুস্থ হয়ে মরার উপক্রম হলে কসাই কাদের হাজির ছেলে গরুটি মালিকের কাছ থেকে পানির দামে কিনে নেন। সন্ধ্যার পরে গরুটি যানবাহনযোগে লোকচক্ষুকে ফাঁকি দিয়ে কেশরহাট মাছ বাজারে জবাই করার জন্য রাখেন। সেখানে কসাই কাদেরের কর্মচারী বাবুল হোসেন গরুটি পাহারা দেন। অসুস্থ গরুটির দুই জায়গায় মাংস পঁচে যাওয়ায় বসছে মাছি। গভীর রাতে গরুটি জবাই করে বাজারের ভাতের হোটেল ব্যবসায়ীসহ অন্যান্যদের কাছে মাংসগুলি বিক্রি করা হবে। 

এলাকাবাসীর অভিযোগ এখানকার কসাই ও ভাতের হোটেল এর দোকানদারদের যোগসাজশে দিনের পর দিন বিক্রি হচ্ছে অসুস্থ গরুর মাংস। নিয়ম অনুযায়ী গরু জবাই করার পূর্বে তা সুস্থ রয়েছে কি না, তার সনদ ও জবাইয়ের অনুমোদন নিতে হয় উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের থেকে। কিন্তু কসাই কাদের হাজি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কোনো রকম পরীক্ষা ছাড়াই অসুস্থ গরু লোক চক্ষুর অন্তরালে রাতের আঁধারে জবাই করে ফ্রেশ গরুর মাংস বলে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে আর্থিক মুনাফা লুটে নিচ্ছে। এতে একদিকে যেমন প্রতারিত হচ্ছেন গ্রাহক অন্যদিকে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে স্থানীয়দের স্বাস্থ্য। তার বিরুদ্ধে ওজনে কম দেওয়ার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। 

স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, কসাই কাদের হাজি দীর্ঘদিন যাবত কেশরহাট বাজারে অসুস্থ গরু, মরা গরু রাতের আঁধারে অল্প দামে কিনে মাংসগুলি বাজারে বিক্রি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এখানকার ভাতের হোটেল ব্যবসায়ী টিপু, মিজান, আকরাম, আনাম, কছির, কামরুলও ইনসানসহ অন্যান্যরা কসাই কাদের হাজির থেকে অল্পদামে গরুর মাংস কিনে তা কালাভুনা করে উচ্চমুল্যে ভোজন রসিকদের কাছে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, কাদের হাজি কয়েকদিন আগে ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত দুটি অসুস্থ গরু জবাই করে বিক্রি করেন। তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তার ছেলেসহ লোকজন প্রভাব খাটানোয় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়না। 

অভিযুক্ত কাদের কসাইয়ের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানান, গরুর মালিক কেশরহাট পৌর এলাকার বাকশৈল গ্রামের ফজলু। অসুস্থ গরুটিকে চিকিৎসা দিয়েও সুস্থ না হওয়ায় গরুটি বিক্রি করেন। আমার ছেলে গরুটি কিনে এনেছে। তিনি অসুস্থ গরুর মাংস বিক্রি করার কথাটি স্বীকার করলেও মৃত গরুর মাংস বিক্রি করেননা বলে জানান। তবে তিনি যার কাছে গরুটি কিনেছেন বলে জানিয়েছেন, সেই ঠিকানায় গিয়েও তার সত্যতা মেলেনি। ফজলু এ ধরনের কোন গরু কসাই কাদেরের কাছে বিক্রিই করেননি বলে জানান। এসময় সাংবাদিকদের অভিযুক্ত কসাই কাদের মোবাইল ফোনে ম্যানেজের চেষ্টা চালান। 

এবিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: খন্দকার সাগর আহম্মেদ বলেন, কেশরহাটে কসাই কাদের হাজির বিরুদ্ধে এর আগে কয়েকটি অভিযোগ পেয়েছি। তা সতর্ক করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কাজ করেন উপজেলা স্যানিটারী কর্মকর্তা। 

এবিষয়ে উপজেলা স্যানিটারী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, কসাই কাদের হাজি কেশরহাট পৌর মেয়র এর ভাই। তার বিরুদ্ধে কিছু করতে গেলে মেয়র সাহেব রিকোয়েস্ট করেন বলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়না। 

এবিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জোবায়দা সুলতানা জানান, অভিযোগটি শুনলাম। বিষয়টি সরেজমিনে তদন্ত করে দেখা হবে। প্রমাণ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মন্তব্য করুন