বিনোদন প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ০৬:৩৭ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

পাগল হাসানের মৃত্যুতে তারকাদের শোক

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার কয়েক ঘন্টা আগেই ফেসবুকে সাদাকালো একটি ছবি প্রফাইল পিকচার দিয়ে পাগল হাসান লিখেছিলেন 'সাদা কালোই প্রথম আলো'। 

কে জানতো তার কয়েক ঘন্টা পরই তিনি এই পৃথিবীর কাছে সাদাকোলা হয়ে জাবেন। সবাই শুধু তার স্মসৃতি হাতরে বেড়াবে। 

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) আনুমানিক সকাল ৬টার দিকে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে সুরমা ব্রিজ সংলগ্ন  মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার মতিউর রহমান হাসান ওরফে পাগল হাসান (৩৩) । বাসের সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে কণ্ঠশিল্পী পাগল হাসানসহ দুজন নিহত হয়েছেন।  আহত হয়েছেন সিএনজিতে থাকা আরও তিন জন। 

শিল্পী পাগল হাসান অনেক শ্রোতাপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন। তার কন্ঠের যাদুতে যেমন তিনি শ্রোতাদের মুগ্ধ করেছেন তেমনি তার লেখনী ও সুরের মায়াজালেও আবদ্ধ করেছিলেন অনেককে। তারমধ্যে ‘আসমানে যাইও নারে বন্ধু...’, ‘জীবনখাতায় প্রেম কলঙ্ক...’, ‘মন আমার মরা নদী...’, ‘মাটির বালাখান...’ ‘ভুলিয়া না যাইও..’ ‘মইরা গেলে কদর বাইড়া যায়..’ অন্যতম।  

তাঁর মৃত্যুর খবরে সঙ্গীতাঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছাঁয়া । তার এই অকাল মৃত্যু সবারই মানতে কষ্ট হচ্ছে। কেউ মেনে নিতে পারছেন না তার এই অসমেয় আকস্মিক চলে যাওয়া। আমাদের সঙ্গীতাঙ্গনের একাধিক তারকা তাকে জানিয়েছেন শোকবার্তা। 

বাংলা গানের যুবরাজ আসিফ আকবর তাকে স্মরণ করেছেন হৃদয়ের সমস্ত আবেগ নিংড়ে। নিজের ভেরিফাইড পেজে তিনি লিখেছেন ‌' বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ড সড়ক দূর্ঘটনায় আজ নিহত হলো পাগল হাসান।  তরুন টগবগে সুনামগঞ্জের ছেলেটা গীতিকার সুরকার গায়ক হিসেবে ছিল অমিত প্রতিভার অধিকারী। মানুষ মইরা গেলে কদর বাইড়া যায়, বাইচ্চা থাকতে নিকৃষ্ট কয় মরলে শ্রেষ্ঠ পদক পায়- মূলতঃ এই গানটির মাধ্যমেই তার সঙ্গে সখ্যতা আমার। সৎ স্পষ্টবাদী বন্ধুবৎসল হাসান সিলেটী একসেন্টেই কথা বলতো। আফনে বারিত যাইবেন, ঘরে হাই কমোড লাগাইসি। নতুন ঘর বানাইসি, পানি কমলে যাইবেন। দুজনার ব্যস্ততায় আর যাওয়া হয়নি। 

তিনি আরও লিখেন, হাসান মতিউর রহমান- নিজেকে পাগল হাসান নামে শুনতেই পছন্দ করতো। তার কথাবার্তা চিন্তাভাবনার দর্শন ছিল উচ্চ মার্গীয়। সে বলতো- গরীবই গরীবরে মারে! অনেক গবেষণা করে দেখলাম তার কথাই সঠিক। বাংলাদেশে তোলোরে ভাই ফুটবলের জোয়ার- এটাই ছিল তার কথা সুরে গাওয়া শেষ গান। সে ছিল আর্জেন্টিনার ক্রেজী সাপোর্টার, গানের মধ্যেও আর্জেন্টিনার প্লেয়ারের নাম বেশী ঢুকিয়েছে, তার আনন্দের কথা ভেবে টুঁ শব্দও করিনি। আরেকটা গান করে রেখেছে- পাগলও বানাইয়া সুখী হইসোনি গো প্রিয়া। তাকে বলেছি গানটা তুইই গা, আমি প্রিয়া নিয়ে আর গাইবোনা। একদিন বললো- ভাই কোনদিন সাগর দেখসিনা। নিয়ে গেলাম পতেঙ্গা, গভীর সাগরে চলে গেলাম স্পীডবোটে। সে কি আনন্দ তার ! সে ভাবতো খুব শক্তিশালী মানুষ আমি, ভাবতো আমাকে দিয়ে সব সম্ভব! বোকা ছেলে ! একসাথে কেরাম খেলতাম, আমাকে একটা গেম নীলে দিয়ে ভয়ে আর খেলতে চাইতোনা! অফিসে পাশের রুমে দোতারা একটা নিয়ে উদাস মনে গান গাইতেই থাকতো, আমি শুনতাম নিজের রুম থেকে। একদিন বেগমকে ফোনে বলছিলাম টাকা লাগবে, সে বাইরে বের হয়ে বুথ থেকে টাকা তুলে এনে দিয়ে বললো লাগলে আরো দিবে, আমিতো অবাক !! এরকম হাজারো স্মৃতি আমাদের। তোর মৃত্যুর খবরে অনেকদিন পর অনেক কাঁদলাম ভাই আমার, আরো অনেক কাঁদবো। দোয়া করি- মহান আল্লাহ তোর আত্মার শান্তি দিন। তোর স্ত্রী আর ছেলে দুটোকে এই শোক বইবার শক্তি দিন। আমিন।


আজ লেবানন সফরে যাচ্ছি ভাই, বেঁচে ফিরলে যাবো তোর আসল বাড়ী জিয়ারত করতে, আল্লাহর হাতে সোপর্দ। 
আমিন…।'

পাগল হাসানের নিথর দেহের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে তার অবুঝ ছেলে। এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেই ছবিটি পোস্ট করে  সঙ্গীতশিল্পী ও প্রযোজক ধ্রুব গুহ  লিখেছেন ‘এমন মৃত্যু মেনে নেয়া যায় কি! বাবার লাশ দেখে  অবুঝ সন্তানের আহাজারি! 


তিনি আরও লেখেন, অত্যন্ত মেধাবী গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীতশিল্পী পাগল হাসানকে আমরা হারালাম।  হে পরম করুণাময় ঈশ্বর,  ওপারে তাকে শান্তিতে রাখুন  আর তার পরিবারের সহায় হোন।’ 

সঙ্গীতশিল্পী জুয়েল মোর্শেদ লিখেন 'আহা পাগল হাসান !!! ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন'। 

কন্ঠশিল্পী কাজী শুভ লিখেছেন ‌'মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন, পাগল হাসান। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। 
এত সুন্দর করে বাউল গান আর কে লিখবে?'

ক্লোজআপ ওয়ান তারকা কিশোর দাস লিখেছেন 'ভাই… মোঃ মতিউর রহমান হাসান, বিশ্বাস করা যায় না…ঈশ্বর আপনার আত্মা শান্তিতে বিশ্রাম দিন'। 

ক্লোজআপ ওয়ান তারকা মুহিন খান লিখেছেন 'প্রিয় হাসান এভাবে দিন চলে যাবে ,আমিও চলে যাব কোন একদিন.... আজ সকালে সড়ক দুর্ঘটনায় আমাদের এই কণ্ঠ যোদ্ধা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন.... ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন...আল্লাহ্ তাঁকে জান্নাতের পাখি বানিয়ে দিন ... আমিন ছুম্মা আমিন'। 

কন্ঠশিল্পী এফ এ সুমন লিখেছেন 'খবরটা শুনে বিশ্বাস করতে খুব কষ্ট হচ্ছে , পাগল হাসান এর অকাল মৃত্যু, ওপারে ভালো থাকিস আমার প্রাণের ভাই'। 

সঙ্গীতশিল্পী মুহাম্মদ মিলন লিখেছেন 'ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন,, আহা হাসান ভাই এইতো সেদিন কত কথা'। 

কন্ঠশিল্পী তশিবা বেগম লিখেছেন 'ও পাগল ভাই কই গেলায় গো।পাগল ভাই তুমি উপরে গিয়া জিতিগেছ।আমরা কিলা সহ্য করতাম।ও পাগল ভাই গো'। 

এছাড়াও আরও অনেক সঙ্গীতশিল্পী, বিনোদন সাংবাদিক ও শুভাকাঙ্খীরা তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন। 

মন্তব্য করুন