মো. আলমগীর হোসেন, নবীনগর

প্রকাশিত: ২৯ মে, ২০২৪, ০৩:৪০ এ এম

অনলাইন সংস্করণ

বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার এককালে মৃৎশিল্পের বেশ সুনাম ছিল, কালের বিবর্তনে নানান প্রতিকূলতায় এবং প্লাস্টিক মেলামাইন, সিলভার আর স্টিলের সামগ্রী ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে হারিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প।

এ উপজেলার নারায়ণপুর, শ্রীঘর, শ্রীরামপুর, বিটঘর, ইব্রাহিমপুর, ভোলাচং ছিল মৃৎশিল্পের প্রাণ কেন্দ্র। এ সব গ্রামের মৃৎশিল্পীরা সুনিপুণ ভাবে তৈরি করতো হাড়ি, পাতিল, বাসন, কলস সহ নানান তৈজষপত্র।

তবে নান্দনিক এসব দ্রব্য এখন আর চোখে পড়ে না। ফলে নবীনগরের মৃৎশিল্পীদের জীবন জীবিকায় পড়েছে আর্থিক অভাব অনটন। একদিকে বেড়েছে মাটি ও জ্বালানির দাম, আরেক দিকে কমেছে তৈরি পণ্যের চাহিদা। বাপ দাদার পেশায় আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকেই। মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা চাচ্ছেন তারা। বয়সের ভারে বৃদ্ধ হচ্ছে তবুও পাচ্ছে না বয়স্ক ভাতা। নানান প্রতিকূলতার ফলে নতুন করে এই পেশায় কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তাছাড়া পেশাগত প্রয়োজনে ব্যাংক থেকেও ঋণ পাচ্ছেন না তারা।

নবীনগর পৌর এলাকার ভোলাচং কুমার পাড়ার শুধাংশু পাল রূপালী বাংলাদেশকে জানান, বাপ দাদার কাছ থেকে শিখা এই পেশায় প্রায় ৩০ বছর যাবত আছি, অন্য কোন কাজ জানা না থাকায় চাইলেও আর অন্য কিছু করতে পারছি না।

ভোলাচং গ্রামের নেপাল পাল রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ১৫ বছর বয়সে বাপ দাদার এই পেশায় প্রায় ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আছি। বর্তমানে কেউ নতুন করে এ পেশায় আসছে না, তাছাড়া এই পেশায় পরিশ্রম বেশি লাভ কম।

এলুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈরি তৈজসপত্র ব্যবহারের ফলে মাটির তৈরি তৈজসপত্রের চাহিদা তলানিতে পৌছে গেছে। দীর্ঘদিন এলুমিনিয়ামের তৈজসপত্র ব্যবহারের ফলে পেটের পীড়া সহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। তাই ইদানীং স্বাস্থ্যবিদরা মাটির তৈরি তৈজসপত্র ব্যবহারের স্বাস্থ্যগত সুফল গুলোর প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

নবীনগরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে বাঁচাতে সরকারের বহুমুখী উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণকরা দরকার বলে স্থানীয় মৃৎশিল্পরা মনে করেন।

পৌর মেয়র শিব শংকর দাস রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমাদের নবীনগর অনেকগুলো গ্রামে মৃৎশিল্প ছিলো, বর্তমানে যারা এই পেশার সাথে জড়িত তারা খুবই হতদরিদ্র। আমার জানামতে মৃৎশিল্পের সাথে জড়িতরা সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা ও প্রণোদনা কোনোদিন পেয়েছে বলে আমি জানিনা। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে শিল্প জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে যদি আধুনিক রুপ দেওয়া যায় তাহলেই মৃৎশিল্পটাকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর ফরহাদ শামীম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ঐতিহ্যবাহী শিল্পগুলোকে সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশ সরকার সব সময় সচেষ্ট। সরকারি প্রণোদনা আছে, তারা যদি চাই ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে।

মন্তব্য করুন