আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৮ মে, ২০২৪, ০৭:৫১ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

সেপটিক ট্যাংকে মিলল এমপি আনারের দেহাবশেষ

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। ছবি : সংগৃহীত

এক প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে কলকাতার গণমাধ্যম জানিয়েছে, সঞ্জীবা গার্ডেন্সের বিইউ ৫৬ ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংক থেকে ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের লাশের চার টুকরো উদ্ধার করা হয়েছে। তবে দুই দেশের গোয়েন্দারা উদ্ধার হওয়া টুকরোগুলো দেহাবশেষের অংশ কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেনি। ডিএনএ পরীক্ষার পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন কলকাতা সফররত ঢাকার গোয়েন্দারা।

জানা গেছে, এমপি আনারকে হত্যা করে তার মরদেহের মাংস টুকরো টুকরো করে কমোডে ফেলে দিয়েছিল ঘাতক কসাই জিহাদ হাওলাদার। এর পরিমাণ হবে প্রায় ৪ কেজি। 

এ বিষয়ে ডিবিপ্রধান হারুন অর রশিদ জানান, উদ্ধার হওয়া মাংস নিহত এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহের কিনা তা এখন বলা যাচ্ছে না। ডিএনএ পরীক্ষার পর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। নিউ টাউনের যে ফ্ল্যাটে এমপি আনার খুন হয়েছেন সেই ভবনের সেপটিক ট্যাংকে এই দেহাংশ পাওয়ার তথ্য পশ্চিমবঙ্গের গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেলেও দুই দেশের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা কেউ এখনো এ বিষয়ে অফিসিয়ালি মুখ খোলেননি।

এর আগে, কলকাতা সিআইডিকে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের দেহাংশের খোঁজে হত্যার ঘটনাস্থল সঞ্জীবা গার্ডেন্সের সেই ফ্ল্যাটের কমোড, স্যুয়ারেজ লাইন ভেঙে সার্চ করার অনুরোধ করে ঢাকার গোয়েন্দা দল। পাশাপাশি হাতিশালা লেকও সার্চের অনুরোধ করা হয়। তারই অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার সেই সঞ্জীবা গার্ডেনের সেপটিক ট্যাংকে অভিযান চালানো হয় এবং সুয়ারেজ লাইনের পাইপ ভাঙা হয়।

গোয়েন্দাপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ডিবির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সেপটিক ট্যাংক ভাঙা হয়। কলকাতার সিআইডিকে আমাদের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল সেপটিক ট্যাংক ভেঙে তল্লাশি চালানোর জন্য। উদ্ধারকৃত দেহাংশ যে আনোয়ারুল আজিম আনারের তা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেনি কলকাতায় যাওয়া ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। 

সংসদ সদস্য আনার হত্যাকান্ডে ঘটনায় কলকাতায় যাওয়া ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা ওয়ারী বিভাগের ডিসি মো. আব্দুল আহাদ বলেন, আমরা কলকাতার স্থানীয় সাংবাদিক ও গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পেরেছি, সঞ্জীবা গার্ডেন্সের সেপটিক ট্যাংক থেকে একটি মরদেহের দেহাংশ উদ্ধার করা হয়েছে।

তবে সেটি এমপি আনারের কি না তা আমরা এখনও নিশ্চিত নই। তাছাড়া কলকাতা সিআইডি বা পুলিশ আমাদের এখনও অফিসিয়ালি নিশ্চিত করেনি।

এদিকে যত তদন্ত এগিয়ে যাচ্ছে, এমপি আনারের নৃশংস হত্যাকান্ডে একের পর এক শিউরে ওঠার মতো তথ্য সামনে আসছে। এবার কলকাতার তদন্তে সিআইডি এবং ঢাকার মেট্রোপলিটন পুলিশ জানতে পারল, সাংসদ আনোয়ার উল আজিমকে খুন করার পর তাঁর দেহের টুকরো টুকরো করা মাংস নিউ টাউনের ওই ফ্ল্যাটের বাথরুমেই কমোডে ফেলে ফ্লাশ করে দেওয়া হয়েছিল!

এই হত্যাকান্ডে অভিযুক্ত আরও অন্তত তিন জন কলকাতা থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়েও ঢাকার গোয়েন্দাদের হাতে ধরা পড়েছে। ভিডিও কলে তাদের বয়ানও নেন তদন্তকারীরা। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছিল, সাংসদের দেহাংশ ভাঙড়ের পোলেরহাটে কৃষ্ণমাটি এলাকার খালে প্ল্যাস্টিকের ব্যাগে ভরে ফেলে আসে আততায়ীরা। কিন্তু বার বার ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি করেও দেহাংশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

নিহত সাংসদের দেহ কোথায় গেল, তা নিয়েই এর পর সন্দেহ উঁকি দিয়ে তদন্তকারীদের মনে। এর পরই গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। গ্রেপ্তারকৃতরা দাবি করে, নিহত সাংসদের শরীরের হাড় খালে ফেলে আসা হলেও তাঁর শরীরের টুকরো টুকরো করা মাংস ওই ফ্ল্যাটের শৌচাগারের কমোডের ভিতরে ফেলে বার বার ফ্লাশ করে দেওয়া হয়েছিল।

পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার নিউ টাউনের একটি শপিং মলে গিয়েছিলেন ঢাকার গোয়েন্দা দল। ঢাকার গোয়েন্দাপ্রধান হারুন আশাবাদী, আনোয়ারুলের দেহাংশ মিলবেই। সিআইডি খোঁজ চালাচ্ছে। পাশাপাশি, তিনি সিআইডিকে অনুরোধ করেছেন, নিউ টাউনের ঘটনাস্থলের পাশে যে হ্রদ রয়েছে, সেখানেও তল্লাশি চালানো হোক। ফ্ল্যাটের যে ঘরে খুন করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, তার লাগোয়া শৌচালয়ের বর্জ্য যেখানে জমা হয়, সেখানেও খোঁজ করার অনুরোধ করেছেন হারুন। 

তিনি মনে করছেন, কমোডের মাধ্যমে দেহাংশ ফেলে দেওয়া হতে পারে। হাতিশালার পাশে কাঠের সেতুতেও তল্লাশি চালানোর আর্জি জানিয়েছেন তিনি। এই ঘটনায় বাংলাদেশে ধৃত তিন জনকে জেরা করা হয়েছে। তাঁদের থেকে যে তথ্য মিলেছে, তার সঙ্গে এখানে এসে তদন্ত সূত্রে যা জানতে পারছেন, তা মিলে যাচ্ছে। হারুন জানিয়েছেন, তিন জন জেরায় জানিয়েছেন, কোন ঘরে তাঁরা গিয়েছিলেন। কোথায় খুন করা হয়েছে এমপি আনারকে।

মন্তব্য করুন