রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২১ মে, ২০২৪, ০৬:২৫ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

হাইকোর্টে মামলায় হেরে হতাশ ব্যারিস্টার সুমন

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখার ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের প্রথম শ্রেণিতে ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বাতিল হওয়া এসব আসনে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অপেক্ষমান তালিকা থেকে ভর্তি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি ভর্তি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

রায় ঘোষণার কার্যক্রম শুরু হয় আজ মঙ্গলবার সকাল থেকেই। মাঝখানে এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে টানা সাড়ে ৩টা ধরে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।

এই মামলায় ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। রায় ঘোষণার পুরো সময়জুড়ে এজলাস কক্ষেই ছিলেন তিনি। প্রত্যাশা ছিল, তিনি যে যুক্ত-তর্ক তুলে ধরেছেন সেই হিসাবে রায় শিক্ষার্থীদের ভর্তির পক্ষে আসবে।

এদিন বিকেল সাড়ে ৩টায় রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। রায়ে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণির ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তিতে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। তদন্তের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে দিয়েছেন আদালত।

কমিটিতে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের একজন প্রতিনিধি ও বুয়েটের একজন আইটি এক্সপার্টকে রাখতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তি বাতিলই থাকবে বলে আদেশে বলা হয়েছে। পাশাপাশি প্রথম শ্রেণিতে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি করতে নির্দেশ দেন আদালত।

এ বিষয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন। কিন্তু আদালতের এ রায়ে ব্যারিস্টার সুমনের পক্ষে আসেনি। বরং তিনি হেরে যান।

রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ব্যারিস্টার সুমন হতাশা নিয়ে বলেন, আমি মানুষ তো! আমি একা হেরে গেলে যতটা কষ্ট পাই তার চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট পাই যখন দেখি আমার সঙ্গে থাকা মানুষগুলো হেরে যায়।

এক প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সিদ্ধান্ত নেব।

আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান, ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন, আইনজীবী শামীম সরদার। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।

এর আগে গত ১৯ মে রাজধানীর ভিকারুননিসার প্রথম শ্রেণির ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তি কেন বাতিল হবে না, এই মর্মে জারি করা রুলের শুনানি শেষে রায়ের জন্য আজকের দিন ধার্য করেন আদালত। বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ের জন্য এ দিন ধার্য করেন।

ভিকারুননিসার প্রথম শ্রেণিতে ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তি কেন বাতিল হবে না, এ মর্মে জারি করা রুল ২ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে ১৬৯ ছাত্রীর ভর্তির ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন আদালত।

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ৫ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

ভিকারুননিসায় ভর্তি নিয়ে বয়সের নিয়ম না মানার অভিযোগ এনে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিচ্ছু দুই শিক্ষার্থীর মা গত ১৪ জানুয়ারি রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। তার ধারাবাহিকতায় ২৮ ফেব্রুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) একটি স্মারক হাইকোর্টে উপস্থাপন করে।

মাউশির ওই আদেশ মতে, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা অনুসরণ করেনি। ১ জানুয়ারি ২০১৭ সালের আগে জন্মগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করার প্রক্রিয়া ছিল বিধিবহির্ভূত। এসব ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ২০১৫ সালে জন্মগ্রহণকারী ১০ জন ও ২০১৬ সালে জন্মগ্রহণকারী শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৫৯ জন। এসব শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করে শিগগিরই মাউশিকে অবহিত করার অনুরোধ করা হলো।

এরপর স্কুল কর্তৃপক্ষ ১৬৯ জনের ভর্তি বাতিল করে। ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের পর এখন অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে এক সপ্তাহের মধ্যে শূন্য আসনে ভর্তি নিতে গত ৬ মার্চ নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ওই আদেশের বিরুদ্ধে ভর্তি বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীর অভিভাবক আপিল বিভাগে আবেদন করেন।

মন্তব্য করুন