ইনসান সাগরেদ, পঞ্চগড়

প্রকাশিত: ২ মে, ২০২৪, ১১:৪৬ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

একটি কৃত্রিম পা বদলে দিতে পারে শুভ'র জীবন কাহিনী

বাবা-মার সঙ্গে হাফিজুল ইসলাম শুভ। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সবাই চায় স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে তার ছোট্ট ছোট্ট স্বপ্নগুলো পূরণ করতে। ধরতে চায় সংসারের হাল। বাবা মা যেন সুখে থাকতে পারে সে জন্য সন্তান'রা জীবন যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। কিন্তু শুভর জীবনে তা সম্ভব নয়। একটি দুর্ঘটনায় তার জীবনের শখ আল্লাদ, স্বাভাবিক জীবন যাত্রা কেরে নিয়েছে। হতে হয়েছে আজীবনের জন্য পঙ্গু। এমনি একটি ঘটনা ঘটেছে পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা ইউনিয়নের চেকরমারি গ্রামের বাবা শহিদুল ইসলাম ও মা হালিমা খাতুনের অতি আদরের সন্তান হাফিজুল ইসলাম শুভর (২১)। তার একটি স্কুল পড়ুয়া ছোট্ট বোন রয়েছে।

জানা যায়, শুভ ২০১৯ সালে এসএসসি পাশ করেন। ইচ্ছে ছিলো আরো পড়ালেখার। কিন্তু দারিদ্রতার কষাঘাতে পড়ালেখার পাঠ শেষ না করেই সংসারে সহযোগিতার জন্য কর্ম জীবন বেছে নিতে হয় তাকে। করতে থাকে ট্রাক চালকের সহযোগী হিসেবে কাজ। বেশ ভালো ভাবেই রপ্তও করেছিলো ট্রাক চালানো। কিন্তু ট্রাক চালিয়ে সংসারের হাল ধরা হলোনা আর তার। বরং যেটুকু সহায় সম্বল ছিলো তা বিক্রি করে চালানো হয় শুভর চিকিৎসা।

২০২৩ সালে ২৬ শে আগস্টের দিন ট্রাক ভর্তি  সিমেন্ট নিয়ে ফিরছিলেন তার নিজ জেলায়।হঠাৎ করে ট্রাকটি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট এলাকায় পৌছালে ট্রাকটির যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। সড়কের পাশে ট্রাকটি দাঁড় করিয়ে তা মেরামত করার জন্য ট্রাকের নিচে শুয়ে পড়ে কাজ করছিলো শুভ। হঠাৎ করে পেছন থেকে অপর একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই ট্রাকটিকে ধাক্কা দেয়।

ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয় ট্রাকের নিচে শুয়ে থাকা শুভর ডান পা। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে রংপুর এবং পরে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য পাঠানো হলেও তার ডান পা টি পুরোটায় কেটে ফেলতে হয়। পঙ্গু হয়ে গৃহবন্দী জীবন বেছে নেন তিনি। দীর্ঘদিনের ঘরবন্দী জীবন তার আর ভালো লাগে না। শুভর রয়েছে দৃঢ় মনোবল। অসুস্থ বাবার কষ্ট সহ্য করতে পারছেন না। একটি কৃত্রিম পা হলে সে স্বাভাবিক ভাবে চলতে পারবে কিছু একটা করতে পারবে। আবারও ধড়তে পারবে সংসারের হাল। আদরের ছোট্ট বোনটিকে পড়ালেখা করিয়ে মানুষের মত মানুষ করার।

শুধু প্রয়োজন একটি কৃত্রিম পায়ের, কিন্তু তার পরিবারের পক্ষে কৃত্রিম পা নেওয়া সম্ভব নয়। এসময় শুভ আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে তার চোখের কোন থেকে পানি পড়তে থাকে।

তিনি বলেন, এই সমাজে তো সহযোগিতা করার মত অনেক মানুষ রয়েছে। তাদের কাছে আমার বিশেষ অনুরোধ রইল, আমি বাঁচতে চাই আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই। এজন্য কি সমাজে একটি মানুষ ও নেই যে আমাকে একটি কৃত্রিম পা দান করতে পারবে?  আপনার একটু সহযোগিতায় বদলে যাবে আমার জীবন।

মা হালিমা খাতুন বলেন, ইচ্ছে ছিল আমার একমাত্র ছেলেকে পড়ালেখা করিয়ে ভালো একটি অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু দারিদ্রতা আমাদের সেই সুযোগ দেয়নি। দারিদ্রতার কারণে ট্রাকের হেলপারি করতে গিয়ে পঙ্গু হয়ে ফিরে আসতে হয় আমার সন্তানকে। নিজেকে ঘর বন্দী করে রাখে নিজেই। একটি কৃত্রিম পা হলে আমার সন্তান শুভ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে। তাই বিত্তবানদের কাছে অনুরোধ করছি আপনারা একটু এগিয়ে আসুন সহযোগিতার হাতটি বাড়িয়ে দিন।

শুভর বাবা বলেন, ছেলের চিকিৎসার পেছনে সব শেষ করেছি সহায় সম্বল সব শেষ করে মানুষের কাছে হাত পেতে যোগাড় করে প্রায় ৭ লক্ষ টাকা ফুরিয়েছি চিকিৎসার পেছনে। এখন ভিটে মাটি ছাড়া আর অবশিষ্ট কিছু নেই। আমি নিজেই একজন স্ট্রকের রোগী জীবনের কোন নিশ্চয়তা নেই। কাজ করতে পারিনা। খেয়ে না খেয়ে পুরো পরিবার কোন মত জীবন যাপন করছি। হয়তো আমার ছেলেটির ভাগ্যে এমনি ছিলো। এখন ছেলেটির একটি কৃত্রিম পা আর একটা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হলে একটু শান্তিতে থাকতে পারতাম।

মন্তব্য করুন