মেহেদী মাসুম, লক্ষ্মীপুর

প্রকাশিত: ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ০১:৪২ এ এম

অনলাইন সংস্করণ

ঐতিহাসিক রায়পুরের বড় মসজিদ

এক সময় উপমহাদেশ তথা আরব বিশ্বের অনেক ধর্ম প্রচারকের আগমন ঘটেছিল বাংলাদেশে। ধর্ম প্রচারে তারা ছড়িয়ে পড়েন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

এদের কেউ কেউ স্থায়ীভাবে লক্ষ্মীপুর জেলা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে ধর্ম প্রচার করে গেছেন। ধর্ম প্রচারের সময় তারা স্থাপন করেছেন এদেশে বহু মসজিদ। তার মধ্যে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলায় স্থাপন করা হয় রায়পুর বড় মসজিদ। যা বর্তমানে এক ঐতিহাসিক স্থাপনা। এই মসজিদটির বয়স হয়েছে প্রায় ২৫০ বছর। 

ইতিহাস থেকে জানা যায়, রায়পুর বড় মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা রায়পুরের পীর মাওলানা ফয়েজুলুল্লাহ। তিনি এই এলাকায় বুড়া হজরত নামে পরিচিত। তিনি এসেছিলেন সুদূর বাগদাদ (ইরাক) থেকে।

প্রথমে রায়পুরের দক্ষিণ-পূর্ব কেরোয়া গ্রামে তিনি স্বপরিবারে বসবাস শুরু করলেও তার সন্তান বড় মিয়া হুজুর রায়পুর বাজারের পশ্চিমে নতুন বসতি স্থাপন করে ধর্ম প্রচার করেন। সে বাড়িটি এখনো নতুন পীর বাড়ি হিসেবে পরিচিত।

বাংলা ১২১৭ সাল এবং আরবি ১২৩১ হিজরিতে পীরে কামেল হযরত মাওলানা শাহ ফয়েজুলুল্লাহ (রাঃ) রায়পুর বড় মসজিদ নির্মাণ করেন। তৎকালীন রওশন আলী ব্যপারী নামের ধর্মপ্রাণ ও দানশীল ব্যক্তি  মসজিদের জন্য ২.৭৫ একর জায়গা ক্রয় করে তা ওয়াকফ  করে দেন। 

বুড়া হযরত শাহ ফয়েজুলুল্লাহ হুজুর মাওলানা কেরামত আলী জৈনপুরী হুজুরকে এত বেশি ভক্তি শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসতেন যে, তখন জৈনপুরী হুজুরকে দিয়েই বড় মসজিদের প্রথম ভিত্তি প্রান্তর স্থাপন করান।

এই ঐতিহ্যবাহী বড় মসজিদ নির্মাণে সময় লাগে টানা ১০বছর। মসজিদের প্রধান কারিগর আনা হয় অবিভক্ত ভারতের কলকাতা থেকে। প্রধান কারিগরসহ বেশির ভাগ সহযোগিরা ছিলেন ভারতের। পাশাপাশি মসজিদ নির্মাণে এলাকার লোকজনও সহায়তা করেন। 

প্রাচীন আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর এ মসজিদে রয়েছে ২৩টি আকর্ষণীয় গম্বুজ, ৯টি দরজা, ১টি মিনার এবং ১টি বড় গেইট সম্বলিত এই মসজিদ রায়পুরের জনপদে বিশাল খ্যাতি লাভ করে। বহু দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এই মসজিদে নামাজ আদায় করার জন্য প্রতিনিয়ত আসেন।

পীরে কামেল বুড়া হযরত শাহ ফয়জুল্লাহ হুজুর এই মসজিদের প্রথম ইমামতি করেন। মসজিদটিকে রায়পুরবাসী তাদের গর্বের ও শ্রদ্ধার যায়গায় স্থান দিয়েছেন 

এবিষয়ে রায়পুর বড় মসজিদ কমিটির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক কাজি জামসেদ কবির বাক্কিবিল্লাহ বলেন, মসজিদটি এই অবস্থায় ছিল না। আমরা বড় মসজিদের দায়িত্ব পাওয়ার পর মসজিদের সংস্কারের কাজে হাত দিয়েছি। বিভিন্ন মানুষের কাছে থেকে অনুদান সংগ্রহ করে অনেক চেষ্টায় মসজিদটিকে বর্তমান আধুনিকায়নে আনতে পেরেছি।তবে মসজিদটিকে আরও আধুনিক করার জন্য আমরা চেষ্ঠা করে যাচ্ছি। স্থানীয়দের পাশাপাশি দূর দুরান্ত থেকে এই মসজিদে অসংখ্য মানুষ নামাজ আদায় করার জন্য আসেন।

মন্তব্য করুন