বগুড়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২ মে, ২০২৪, ১১:৩৪ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

মেডিকেলে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আহত ১৩, নেপথ্যে টেবিল দখল

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) পড়ার টেবিল দখল করা নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘ‌টে‌ছে। ছাত্রাবাসের অন্তত সাতটি কক্ষ ভাঙচুর হয়েছে। সংঘর্ষে আহত হয়ে‌ছেন অন্তত ১৩ জন। এ ঘটনায় একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরী সভায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মেডিকেল কলেজ প্রশাসন। 

বৃহস্পতিবার (২ মে) মে‌ডি‌কেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. রেজাউল আলম এতথ্য নিশ্চিত করে জানান, তদন্ত কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

এর আগে বুধবার (১ মে) রাত ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেন- চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী (৩০তম ব্যাচ) রিদওয়ান হক, একই ব্যাচের তালহা, নাদিম ও আরিফ। তারা কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শৈশব রায়ের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। এছাড়া সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেনের সমর্থকদের মধ্যে আহত সীমান্ত, আলী হাসান, ইসমাম ও অপর্ণ নিলয়কে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুই পক্ষের অন্তত পাঁচজন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। 

আহতদের পরিচয় নিশ্চিত করে মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আনিসুর রহমান জানান, ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে আহত কয়েকজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। অধ্যক্ষের নির্দেশে তিনজন শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। 

পুলিশ ও মেডিকেল শিক্ষার্থীরা জানায়, তৃতীয় বর্ষের (৩১ তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ফুয়াদ ছাত্রলীগ সভাপতি শৈশব রায়ের অনুসারী। একই ব্যাচের আলী হাসান সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জলের অনুসারী। গত মঙ্গলবার এই দুই গ্রুপের ছাত্রদের মধ্যে একটি পড়ার টেবিল দখলকে কেন্দ্র করে বাকবিতণ্ডতা হয়। 

আগের দিনের জের ধরে বুধবার রাতে ফুয়াদ তার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে আলী হাসানের কাছে থাকা পড়ার টেবিলটি নিতে গেলে দুই পক্ষের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। পরে সংঘর্ষের রেশ পুরো ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে রাত ১১টার দিকে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. রেজাউল আলম ও পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে তাদের লক্ষ্য করেও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে দু'পক্ষের ছাত্ররা। এ সময় অধ্যক্ষের নির্দেশে মোফাজ্জলের অনুসারী ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল, ছাত্রলীগ কর্মী মোহাইমিন রাইম ও সীমান্তকে আটক করে পুলিশ। ছাত্রবাসের বাহিরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে উত্তেজিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। 

বিনা উস্কানিতে কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ করেন শজিমেক কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শৈশব রায়। তিনি বলেন, পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বর্তমানে সিলেটে আছি। একটি টেবিল দখলকে কেন্দ্রে করে কিছু দুষ্ট প্রকৃতির শিক্ষার্থীরা আমার কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে আহত করেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করতে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করতে জরুরী সভা আহবান করা হয়েছে। 

কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শৈশব রায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম। তার দাবি, বর্তমান সভাপতি শৈশব রায়ের নির্দেশে তার অনুসারীরা ছাত্রলীগের একাংশ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর আকস্মিকভাবে হামলা চালিয়েছে। তারা কলেজের ছাত্রাবাসের পাঁচটি কক্ষ ভাঙচুর করেছে। শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিল,  ল্যাপটপ, ফ্রিজ ছাড়াও ঘরের আসবাবপত্র নষ্ট হয়েছে। 

এদিকে সংঘর্ষের ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছেন সহ-সভাপতি অর্ঘ্য রায়। তিনি বলেন, হোস্টেলে একটি পড়ার টেবিল নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা দুই পক্ষ হয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘাতে জড়িয়েছে। কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেনের অনুসারীরা ক্যাম্পাসে আগের মতো সংঘাত সৃষ্টি করার পায়তারা করছে। হামলার সঙ্গে আমাদের কেউ জড়িত নয়। কলেজ প্রশাসনের তদন্তে তা বেরিয়ে আসবে।

মন্তব্য করুন