ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৭ জানুয়ারী, ২০২৪, ১২:০৩ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

২১ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস

কুয়াশার দাপট আর উত্তরের হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে দেশের অনেক এলাকা। দেশের ২১ জেলায় বইছে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। রাজধানী ঢাকায় ঠাণ্ডা কিছুটা কমলেও মধ্য ও উত্তরের জনপদে শীতের তীব্রতা বেশি। অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহে নাকাল জনজীবন। পঞ্চগড় ও নওগাঁয় বইছে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। এদিকে তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রাজধানীতে কিছুটা কমেছে শীতের প্রকোপ। শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল ৭টায় প্রকাশিত পরবর্তী ৬ ঘণ্টার জন্য ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার আবহাওয়ার পূর্বাভাসেও এসেছে তাপমাত্রার বৃদ্ধির বিষয়টি। এতে বলা হয়েছে, গতকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৩.২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

রংপুর ও রাজশাহী বিভাগসহ কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, মৌলভীবাজার, যশোর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলার উপর দিয়ে এখনো মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। এই শৈত্যপ্রবাহের বিস্তৃিতি আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

এছাড়া সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে। চলতি মাসের শেষে কয়েক জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনাও আছে, জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ শনিবার (২৭ জানুয়ারি) অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। তবে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

এছাড়াও ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক পরিবহনে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে। এই সময়ে সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে পঞ্চগড়ে বেড়েছে শীতের দাপট। বেশ কিছুদিন ধরেই দেখা নেই সূর্যের। শৈত্যপ্রবাহে কাবু সাধারণ মানুষ। গত দুইদিন ধরে এ জেলায় চলছে মৌসুমের সর্বনিন্ম তাপমাত্রা। আজ শনিবার (২৭ জানুয়ারি) ৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গতকালের চেয়ে কিছুটা বেশি।

পঞ্চগড় জেলার আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার (২৭ জানুয়ারি) আভাসে বলা হয়, আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক পরিবহন চলাচল ব্যাহত হতে পারে।

শীতের প্রকোপ আর তেঁতুলিয়ার মহানন্দা নদীর হিম ঠান্ডায় অনেক পাথর শ্রমিককে পাথর তুলতে দেখা গেছে। শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল জেলার তেঁতুলিয়ায় মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়। সকালে তাপমাত্রা রেকর্ডের তথ্যটি জানান, জেলার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ।

এদিকে নওগাঁর ওপর দিয়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তর থেকে আসা হিমশীতল বাতাস আর কনকনে শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এই জনপদের জনজীবন। কয়েক সপ্তাহ থেকে হাড়কাঁপানো শীতে জবুথবু এ অঞ্চলের মানুষ। শনিবার সকাল ৯টায় নওগাঁর বদলগাছী আবহাওয়া অফিস জেলায় সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেন।

তবে ঘন কুয়াশার কারণে শীত আরও বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে, জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। উত্তরের হিমেল হাওয়ায় চুয়াডাঙ্গাও শীতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে আছেন খেটে খাওয়া ছিন্নমূল মানুষ। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছেন অনেকেই। শীতে সময় মতো কাজে যেতে পারছেন না তারা। নষ্ট হচ্ছে ধানের বীজতলা। তীব্র ঠান্ডায় দেখা দিচ্ছে শীতজনিত নানা রোগ। হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা।

চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত দু-দিন ধরে জেলায় শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

এদিকে তীব্র শীতে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে রোটাভাইরাস জনির কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে প্রতিদিন হাসপাতালের আউটডোরে ৫০০ থেকে ৬০০ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ছাড়া প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ শিশু রোগী আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ সিনিয়র কনসালটেন্ট আসাদুর রহমান মালিক খোকন।

কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে আজও বয়ে যাচ্ছে মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহ। মাঘের শীতের সঙ্গে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া লোকজন ঘরের বাইরে খুব একটা যাচ্ছেন না। সন্ধ্যার আগেই গ্রামীণ হাট বাজারগুলো লোক শূন্য হয়ে পড়ছে। এক সপ্তাহ ধরে এ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ।

শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় দুপুর পর্যন্ত বেশি ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে।

দিনের অধিকাংশ সময় সূর্যের দেখা মিলছে না। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের কিছুটা উত্তাপ ছড়ালেও বিকেল হতেই তাপমাত্রা আবারও নিম্নগামী হচ্ছে।

ঠান্ডার সঙ্গে হিমেল হাওয়ায় কাবু হয়ে পড়েছে ১৬টি নদ-নদী তীরবর্তী চর ও দ্বীপচরের মানুষ। গরম কাপড়ের অভাবে অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে উষ্ণতা নিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে।

সিরাজগঞ্জের তাপমাত্রা আজকে আরও প্রায় দুই ডিগ্রির মতো কমেছে। তবে সকাল থেকেই দেখা মিলেছে সূর্যের। সূর্যের আলোয় কেটে গেছে কুয়াশা। তবে সকাল থেকেই বইছে হিমেল বাতাস। যা জনজীবনে কিছুটা অস্বস্তি এনেছে।

শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া অফিস জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গতকালের তুলনায় ১ দশমিক ৩ ডিগ্রি কম।

বাঘাবাড়ি প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, সকাল ৬টায় এখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরপর সকাল ৯টায় কিছুটা কমে সেটা ৯ ডিগ্রিতে দাঁড়ায়। 

রোববার (২৮ জানুয়ারি) যেমন থাকবে আবহাওয়া

আবহাওয়া অফিস জানায়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী-অববাহিকার কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং দেশের অন্যত্র কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন চলাচল ব্যাহত হতে পারে এবং সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।

সোমবার (২৯ জানুয়ার) যেমন থাকবে আবহাওয়া

পূর্বাভাসে সংস্থাটি জানায়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী-অববাহিকার কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং দেশের অন্যত্র কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশা পড়তে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন চলাচল ব্যাহত হতে পারে। এছাড়া সারা দেশে রাতের সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী পাঁচ দিনে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা রয়েছে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস।

মন্তব্য করুন