শরীয়তপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৫ জুলাই, ২০২৪, ০৪:৪১ এ এম

অনলাইন সংস্করণ

মৌসুমেও পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ কম, জ্বালানি খরচ উঠছে না জেলেদের

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ভড়া মৌসুমও পদ্মা-মেঘনা নদীতে দেখা মিলছেনা কাঙ্ক্ষিত ইলিশের। জেলেরা দিন-রাত নদীতে চষে বেড়ালেও জ্বালানি খরচ উঠছে না, ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। ইলিশের এই সংকটের ফলে স্থানীয় আড়তগুলোতেও ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার পথে।

ঈদুল আজহা পরবর্তী সময়ে জেলার জাজিরা উপজেলা, নড়িয়া উপজেলা, গোসারহাট উপজেলা ও ভেতরেগঞ্জ উপজেলার পদ্মা-মেঘনা উপকূলীয় জেলে পল্লী ও আড়তগুলোতে ঘুরে এবং জেলেদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে শরীয়তপুরের জাজিরা, নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ, এবং গোসাইরহাট উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার জেলে পরিবার ইলিশসহ অন্যান্য মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। চার উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে প্রবাহমান রয়েছে পদ্মা ও মেঘনা নদী। এই এলাকার অন্ততঃ ৮০ কিলোমিটার নৌ সীমানা থেকে আহরণ করা হয় ইলিশ মাছ। প্রায় ৩১ হাজার ২৪০ দরিদ্র জেলে পরিবার রয়েছে। এর বাইরেও আরো প্রায় ৯ হাজার জেলে আছে। তারা ইলিশসহ অন্যান্য মাছ আহরণ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে। বছরে দুটি সময় অর্থাৎ জাটকা এবং মা ইলিশ সংরক্ষণ সময় ২৫ হাজার ৮২৬ জন জেলে পরিবারকে মাসে ৪০ কেজি করে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। এছাড়া এসব জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন উপকরণ দেওয়া হচ্ছে। ইলিশ উৎপাদন কমে যাওয়ার পেছনে পানি দূষণ, অবৈধ জাল ব্যবহার, অতিরিক্ত মাছ ধরা, এবং জলবায়ু পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য কারণ। নদীর নাব্যতা সংকট এবং ইলিশের খাদ্যের অভাবও মাছের সংখ্যায় প্রভাব ফেলছে।

শরীয়তপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর ইলিশ সংকট শুধু জেলেদের জীবনযাত্রাকেই প্রভাবিত করছে না, বরং স্থানীয় অর্থনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। সমন্বিত ও টেকসই উদ্যোগের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে, যাতে ইলিশের ঐতিহ্যবাহী মৎস্য শিল্প পুনরুদ্ধার করা যায় এবং জেলেদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।

ভেদরগঞ্জ উপজেলার নরশিংহপুর আলুর বাজার ফেরী ঘাটের আড়তদার মকবুল হোসেন বলেন, ইলিশের আমদানি না থাকায় অনেক আড়ত বন্ধ হয়ে গেছে। নড়িয়া সুরেশ্বর ঘাটের মাছের আড়তদার শিহান খান বলেন, "ইলিশের আমদানি না থাকায় ৫ আড়তের ৩টি বন্ধ। "সঠিকভাবে জাটকা সংরক্ষণ না হওয়ায় ইলিশ নদীতে কমেছে। আবারও জেলেরা নদীতে নামলে জালের প্রকারভেদ নিয়ে নৌ পুলিশের হয়রানিতে আছেই।

ভেদরগঞ্জ উপজেলার নরশিংহপুর আলুর বাজার ফেরী ঘাট এলাকার জেলে আবির হোসেন বলেন, তার নৌকায় পাঁচজন জেলে মিলে দিনভর মাছ ধরেন। ছোট বড় ৪টি ইলিশ বিক্রি করে পেয়েছেন ১৫০০ টাকা। এতে তাদের জ্বালানি খরচও উঠে না।অন্য একজন মৎস্যজীবী, মোসলেম হোসেন বলেন, "আগে দিনে ৫০-৬০ কেজি ইলিশ ধরতাম, এখন সেখানে ১০ কেজি ইলিশও পাওয়া মুশকিল।"

এবিষয়ে শরীয়তপুর জেলা মৎস্য  কর্মকর্তা (অ.দা.)পলাশ হালদার বলেন, "আমরা বছরজুড়ে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করছি। বিশেষ করে জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষায় আমরা জেলেদের সচেতন করে আসছি। এ বছর জাটকা সংরক্ষণ সফল হয়েছে। আগামী মৌসুমে এটির সুফল পাবে জেলেরা। তবে নদীতে চর জেগে উঠা, নদীর পানি দূষণ ও ইলিশের খাদ্য হ্রাস পাওয়ায় মিঠা পানিতে ইলিশের বিচরণ কমেছে। তবে ভরা মৌসুমে ইলিশ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।"

মন্তব্য করুন