এনামুল হক

প্রকাশিত: ২৯ মে, ২০২৪, ০৬:৪১ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

গ্রেপ্তার ৩ ডাকাত, উদ্ধার সাড়ে নয় লক্ষ টাকা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

‘মা বুলিয়ান এন্ড সিলভার জুয়েলার্স এর ম্যানেজারের নির্দেশে কর্মচারী মহিউদ্দিন গত ২৬ এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ তারিখে কদমতলী খেজুরের গলিতে অবস্থিত মসলা এন্টারপ্রাইজের কাছাকাছি আরত থেকে ৭০ লক্ষ টাকা একটা নীল রংয়ের স্কুলে বেগে ঢুকিয়ে তাঁতি বাজারের উদ্দেশ্যে পায়ে হেঁটে রওনা দেয়। বিকেল অনুমান ৪ঃ৫০  টায় ইসলামপুরের নবনারায়ণ লেনের প্রবেশ মুখে পৌঁছামাত্র একজন দুষ্কৃতিকারী তাকে ধাক্কা দিয়ে উল্টো অভিযোগ করে ধাক্কা দিলো কেন।

টাকা বহনকারী মহিউদ্দিন "সরি" বলে ক্ষমা চেয়ে চলে যেতে চাইলে আশেপাশে ওত পেতে থাকা আরো ০৭/০৮ জন দুষ্কৃতিকারী তাকে ধাক্কা দেয়ার অভিযোগ তুলে প্রচন্ড কিল, ঘুষি মারতে থাকে। একটা পর্যায়ে তার চোখে আঙ্গুল দিয়ে গুল লাগিয়ে দেয় এবং ঢাকা ভর্তি ব্যাগটি টেনেহেঁচড়ে ছিনতাই করে নিয়ে যায়।

গত ২৭ এপ্রিল ২৪ ইং জুয়েলার্সের মালিক আকিদুল ইসলামের অভিযোগের প্রেক্ষিতে থানায় ডাকাতির ধারায় মামলারুজু হয়।  আশপাশের শত শত সিসি ক্যামেরা বিশ্লেষণ, ডিজিটাল এভিডেন্স কালেকশন করে থানা পুলিশের পাশাপাশি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ছায়া তদন্ত শুরু করে।

এক পর্যায়ে থানা পুলিশ এবং ডিবি পুলিশের তদন্তে এই ডাকাতি মামলার প্লানার ও এক্সিকিউটরদের নাম, পরিচয় সনাক্ত হয়। সনাক্তকৃত আসামিদের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে গত ২৫ তারিখ দিন ও রাতে ডিবি লালবাগ বিভাগের কোতোয়ালি টিমের নেতৃত্বে একাধিক টিম চট্টগ্রাম এবং খুলনায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে ডাকাতির ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী খোকন দাস বাইল্যা খোকন, মূল অপারেশনাল সংগঠক রেজাউল করিম এবং ভিকটিমের গতিবিধি রেকিকারী দলের কামাল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার কালে তাদের কাছ থেকে ডাকাতিলব্ধ নগদ সাড়ে নয় লক্ষ টাকা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেফতার এড়ানোর জন্য অতি সতর্ক এই ডাকাত চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে কোন মোবাইল উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ইতোপূর্বে কোতোয়াল থানা পুলিশ বাবু এবং শাহ আলম কে গ্রেফতার করেছে।  

পুরাতন ঢাকার ফলের ব্যবসায়ী স্বর্ণের ব্যবসায়ী কাপড়ের ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন এই লক্ষ লক্ষ টাকার লেনদেন করে থাকেন খুবই ক্যাজুয়ালি এবং ইনফরমালি। এই লেনদেনে থাকে আস্থা বিশ্বাস এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ নোহা অংকের টাকা পরিবহনের ক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতা নেয়ার নির্দেশনা থাকলেও কাছাকাছি জায়গায় টাকা স্থানান্তর করা হয় বলে উনারা অনেকাংশেই পুলিশকে অবগত করেন না বা সহযোগিতার নেন না।

পুরাতন ঢাকার এই এলাকাগুলোতে প্রতিদিন শত কোটি টাকার বৈধ লেনদেনের পাশাপাশি অনেকেই হুন্ডির টাকা লেনদেন করে থাকেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ডাকাত/ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা উৎপেতে থাকে এই হুন্ডির ব্যবসায়ীদের টাকা ডাকাতি করার জন্য। হুন্ডিত টাকা লেনদেন করা আইন স্বীকৃত না। সে কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা অধিকাংশ সময় বিষয়টি পুলিশ বা আদালতকে অবগত করে না। হুন্ডি ব্যবসায়ীদের এই দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে ডাকাত বা ছিনতাইকারীরা অপচেষ্টায় লিপ্ত থাকে। ডাকাতদের এই অপতৎপরতায় কখনো কখনো বৈধ ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির সম্মুখীন হন।

এই ডাকাতির ঘটনায় মূল মাস্টারমাইন্ড বাইল্যা খোকন। বহুগামী এই খোকন পুরাতন ঢাকায় বসবাস করে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় থেকে কোন ব্যবসায়ী কিভাবে টাকা লেনদেন করে এই সম্পর্কে ভালো করে জানে। অপারেশনাল কমান্ডার রেজাউল করিম একসময় পুরাতন ঢাকাতেই ব্যবসা করতো। খুলনা, বরিশাল, চাঁদপুর, মিরপুর ও ময়মনসিংহ থেকে সমমনা ডাকাতদেরকে ঢাকায় এনে টার্গেটকৃত ব্যক্তিকে নিরস্ত্র কায়দায় কিল ঘুষিতে রক্তাক্ত করে চোখে গুল লাগিয়ে ডাকাতি করে। ডাকাতির কাজে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করার জন্য তারা কম দামের বাটন ফোনে নিবন্ধনহীন সিম লাগিয়ে যোগাযোগ করে ঘটনার পরে মোবাইল এবং সিম ভেঙে চড়ে নদীতে ফেলে দিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পালিয়ে থাকেছে।

সহমর্মিতাহীন এই শহরে কেউ কারো খবর রাখে না বলে সরু রাস্তায় শত মানুষের সামনে ডাকাতি সংগঠন করে নির্ভীঘ্নে অর্ধ কিলোমিটার পথ দৌড়ে পালিয়ে যেতে পেরেছে ডাকাতরা। ব্যবসায়ী ও সর্বসাধারণ যদি তাদের প্রতিষ্ঠান বা বাড়ির গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ভালো মানের সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে, ভিকটিমদের প্রতি যৌক্তিকভাবে সহযোগিতা, সহমর্মিতা প্রদর্শন করে সবাই এগিয়ে আসে তাহলে এ জাতীয় ডাকাত/ ছিনতাইকারীদেরকে প্রতিহত, প্রতিরোধ অথবা গ্রেফতার করে আইন আমলে নিয়ে আসা সম্ভব।গ্রেফতারকৃত ডাকাতদের বিরুদ্ধে ডাকাতি এবং ছিনতাই বিষয়ক একাধিক মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে।

মন্তব্য করুন