নওগাঁ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১ জুলাই, ২০২৪, ০২:৩৬ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহারের ২০ বস্তা চাল নিয়ে গেলেন চেয়ারম্যানের মেয়ে

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা চেয়ারম্যান বাবার ক্ষমতা খাটিয়ে অসহায় ও দুস্থদের জন‍্য বরাদ্দকৃত চাল নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে মেয়ে শাপলা আক্তারের বিরুদ্ধে।

গত ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ঈদ উপহার হিসেবে ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিয়েছিলেন ওই সকল অসহায় ও দুস্থদের জন‍্য। কিন্তু চেয়ারম্যানের ভাগ দাবি করে মেয়ে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ৬০জন অসহায়ের চাল নিয়ে চলে গেছেন। এতে উপজেলা জুড়ে চলছে  সমালোচনা।

ঘটনাটি ঘটেছে গত কুরবানি ঈদের আগে বৃহস্পতিবার ১৩ই জুন নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়ন পরিষদে। অভিযোগ উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল আলম খাঁনের মেয়ে শাপলা আক্তার বাবার প্রভাব খাটিয়ে ওই চালগুলো নিয়ে যায়। 

জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে দরিদ্র, অসহায় ও দুস্থদের জন‍্য প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার ১০ কেজি করে চাল সারা দেশে বিতরণ করা হয়েছে। সেই কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জেলার বদলগাছী উপজেলার সুবিধাভোগীদের মধ্যে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। এর মধ‍্যে পাহাড়পুর ইউনিয়নের ২৩৫৬ জন অসহায়দের ১০কেজি করে চাল মোট ২৩৫৬০কেজি চাল বরাদ্দ করা হয়। 

স্থানীয় একাধিক সুবিধাভোগী গঙ্গা, সজলসহ পাহাড়পুর ইউপির একাধিক সদস‍্য বলেন, ওই দিন ভিজিএফের ১০কেজি করে চাল বিতরণ করা হচ্ছিল। সকাল ১০টায় উপজেলা চেয়ারম্যানের মেয়ে শাপলা কয়েকজন ছেলে নিয়ে পরিষদে এসে বাবার ভাগের চাল কোথায় জানতে চায়। এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের ১০% কার্ডের চাল আমাকে দিতে হবে বলে দাবি করে। তখন ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান কিশোর ও উপস্থিত মেম্বাররা সকল কার্ড বিলি করা হয়েছে জানিয়ে এবার ভাগ দিতে পারবো না বলে জানান। বলা মাত্রই উত্তেজিত হয়ে পড়ে উপজেলা চেয়ারম্যানের মেয়ে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে চাল বিতরণ বন্ধ রাখা হয়।

পরে ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান কিশোর তার কক্ষে নিয়ে গিয়ে কথা বলে শাপলার সাথে।  একপর্যায়ে ৬০জনের জন্য বরাদ্দকৃত ৩০কেজি চালের ২০টি বস্তা শাপলা আক্তার পরিষদ থেকে নিয়ে চলে যায়। আর ঈদ উপহার চাল নিতে আসা ওই ৬০জন হতদরিদ্র বঞ্চিত হয় তাদের প্রাপ্য চাল থেকে।

আরও বলেন, উত্তেজনা বাড়লে থানায় ফোন করা হয়। পরে থানা পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন। 

পাহাড়পুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান কিশোর মোবাইলে বলেন, তেমন কিছু হয়নি জানিয়ে বলেন, ওই দিন উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল আলম খাঁনের মেয়ে শাপলা আক্তার এসে তার বাবাকে ভাগ দিতে হবে বলে ২০বস্তা চাল নিয়ে গেছে। বিষয়টি উপজেলা প্রকল্প ব‍্যস্তবায়ন কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। এছাড়া উপস্থিত ট‍্যাগ অফিসারের দ্বায়িত্বে থাকা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন। আর চাল নিতে আসা ৬০জন সুবিধাভোগী বঞ্চিত হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তাদেরকে পরবর্তীতে চাল কিনে এবং টাকা দেওয়া হয়েছে।  

ভিজিএফের চাল বিতরণের দ্বায়িত্বে থাকা ট‍্যাগ অফিসার উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম মোবাইলে বলেন, সেদিন যথানিয়মে চাল বিতরণ চলছিল এবং আমি পরিষদে উপস্থিত ছিলাম। হঠাৎ শাপলা আক্তার কিছু ছেলেদের নিয়ে পরিষদে এসে উপজেলা চেয়ারম্যানের ১০ পার্সেন্ট চালের ভাগ চায়। পরে সমঝোতার মাধ্যমে ৬০জনের স্লিপ নিয়ে ২০বস্তা (প্রতি বস্তায় ৩০কেজি হিসেবে) চাল নিয়ে পরিষদ থেকে চলে যায়। 

এব‍্যপারে উপজেলা চেয়ারম্যানের মেয়ে শাপলা আক্তার মোবাইলে বলেন, আপনারা প্রমান দিয়ে নিউজ করেন। আমার যেখানে কথা বলার দরকার সেখানে কথা বলবো। 

এব‍্যপারে উপজেলা চেয়ারম্যান শামসুল আলম খান সাথে মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন, এডা তো আমি বলা পারবো না। পাহাড়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান চাউল দিবে না তখন থেকেই গাঞ্জাম করছিল। আপনে আমাক দিবেন না তার কারন কি। পরে কি হছে আমি বলা পারবো না। 

এব‍্যপারে উপজেলা প্রকল্প ব‍্যস্তবায়ন কর্মকর্তা মাইনুল ইসলাম বলেন, এ ব‍্যাপারে ঘটনার দিন পাহাড়পর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান বিষয়টি আমাকে জানিয়েছে। 

এব‍্যপারে বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (অঃদাঃ) কামরুল হাসান সোহাগ মুঠো ফোনে বলেন, এটা তো অনেক আগের ঘটনা। আমি বিষয়টি জানিনা। খবর নিয়ে দেখবো।

মন্তব্য করুন