রূপালী বিশ্ব

প্রকাশিত: ২ জুলাই, ২০২৪, ০৪:৫০ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

আসাম ও অরুণাচলে ভয়াবহ বন্যা

বিমান বাহিনী ও আসাম রাইফেলসের উদ্ধার অভিযান

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের আসাম এবং অরুণাচল প্রদেশে ভয়াবহ বন্যার পরিপ্রেক্ষিতে দুটি বড় অপারেশন সফলভাবে পরিচালিত হয়েছে। শুধুমাত্র আসামেই ১৯ জেলায় পানিবন্দি ৬ লক্ষাধিক মানুষ এই ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে।

ব্রহ্মপুত্র নদীতে অবিরাম বৃষ্টিতে ডুবে যাওয়া ডিব্রুগড় জেলার একটি নদীতীর দ্বীপে চার দিন ধরে আটকা পড়েছেন ১৩জন জেলে। আসাম রাজ্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের (এএসডিএমএ) অনুরোধে ভারতীয় বিমান বাহিনী (আইএএফ) একটি চ্যালেঞ্জিং এয়ারলিফ্ট চালানোর জন্য তার মোহনবাড়ি ঘাঁটি থেকে হেলিকপ্টার মোতায়েন করে তাদের উদ্ধার করেছে।

ডিব্রুগড় পশ্চিম রাজস্ব সার্কেল অফিসার, দেব নারায়ণ হাজারিকা, আইএএফ-এর সাথে যোগাযোগ করেছেন।  অপারেশনের জন্য সমন্বয় নিশ্চিত করেছেন। "সকল উদ্ধারকৃত ব্যক্তি নিরাপদ রয়েছেন বলে মিঃ হাজারিকা নিশ্চিত করেছেন।

বন্যা কবলিত এলাকাগুলো থেকে লোকজনকে উদ্ধারে দুর্যোগ মোকাবিলা বিভাগকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছে সেনা বাহিনী, বিমান বাহিনী, আধা সামরিক বাহিনী এনডিআরএফ, এসডিআরএফ এবং স্থানীয় প্রশাসন। ধেমাজি জেলার বিভিন্ন বন্যা কবলিত এলাকা থেকে ৯ জনকে উদ্ধার করেছে বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার। আর তিনসুকিয়া জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে গতকাল সোমবার ১ হাজার ২৯৩ জনকে উদ্ধার করেছে সেনা  আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা।

যে আটটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, সেগুলো হলো—ব্রহ্মপুত্র, সুবানসিরি, দিখৌ, দিসাং, বুড়িদিহিং, জিয়া-ভারালি, বেকি এবং কুশিয়ারা।

এদিকে চলতি বর্ষার বন্যা দিনে দিনে বিপর্যয়কর রূপ নিচ্ছে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এ রাজ্যটির ১৯টি জেলা ইতোমধ্যে বন্যা কবলিত। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন অন্তত ৬ লাখ ৪৪ হাজার ১২৮ জন মানুষ। শিগগিরই আরও ৬৪টি শিবির খোলা হবে বলে জানিয়েছে দপ্তর।রাজ্য সরকারের দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তরের তত্ত্বাবধানে বন্যা কবলিত জেলাগুলোর বিভিন্ন স্থানে এ পর্যন্ত মোট ৭২টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। এসব শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন ৮ হাজার ১৪২ জন মানুষ। 

আসাম রাজ্য সরকারের দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তর এএসডিএমএ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাজ্যের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলোর মধ্যে অন্তত ৮টির পানি বিপদসীমার অনেক ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বন্যা কবলিত জেলাগুলো হলো কামরুপ, ডিব্রুগড়, তিনসুকিয়া, নাগাঁও, শিবাসাগড়, দারাং, গোলাঘাট, জোড়হাট,মাজুলি, লাখিমপুর, করিমগঞ্জ, কাছাড়, ধেমাজি, মুড়িগাঁও, উদলগুড়ি, নলবাড়ি, সোনিতপুর, তামুলপুর এবং বিশ্বনাথ ।

বন্যায় ইতোমধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। আর একজন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। এএসডিএমএ’র বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই দু’জনকে নিয়ে চলতি বছর জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বন্যা, ঝড় ও ভূমিধসের কারনে আসামে মোট মৃত্যুর সংখ্যা পৌঁছেছে ৪৫ জনে।

বন্যা পরিস্থিতি সবচেয়ে গুরুতর লাখিমপুরে। জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে পানিবন্দি হয়ে পড়েয়েছেন অন্তত প্রায় এক লাখ ৪৪ হাজার মানুষ। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে ধেমাজি এবং কাছাড়। এ দুই জেলায় পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন যথাক্রমে ১ লাখ ১ হাজার ৩৩৩ জন এবং ৬৬ হাজার ১৯৫ জন মানুষ।

সোমবার এক বিবৃতিতে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছেন, পার্শ্ববর্তী অরুণাচল প্রদেশে ব্যাপক বর্ষণ ও তার ফলে সৃষ্টি পাহাড়ি ঢল এই বন্যার জন্য দায়ী। তিনি আরও বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ’র সঙ্গে ইতোমধ্যে টেলিফোনে কথা হয়েছে তার এবং কেন্দ্রীয় সরকার আসামকে যাবতীয় সহায়তা ও সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে বলে জানিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী।

সূত্র : এনডিটিভি

মন্তব্য করুন