নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারী, ২০২৪, ০১:৪৩ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

দেশের ২১টি জেলায় চলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ

দেশের ২১টি জেলায় চলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সেই সঙ্গে রয়েছে কুয়াশার দাপট। যে কারণে সূর্য উঁকি দিতে সময় নিচ্ছে। আবহাওয়ার এ অবস্থার মধ্যে ঢাকাসহ দেশের চার বিভাগে বৃষ্টির আভাস দিয়েছে অধিদপ্তর। উত্তরাঞ্চলে রাত থেকে পড়ছে ঘন কুয়াশা, সেই সঙ্গে রয়েছে হিমেল হাওয়া। এতে করে উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে।

এদিকে তীব্র শীতের মধ্যে ভোরে রাজধানীতে দেখা যায় ঘন কুয়াশা। সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করে গাড়ি। কুয়াশা ও শীতেও সকালে সড়কে দেখা যায় কর্মজীবী ও স্কুলগামীদের চলাচল।

আবহাওয়া অফিস জানায়, ভোর ৬টায় রাজধানীর তাপমাত্রা ছিলো ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো তেঁতুলিয়ায় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) দিনগত মধ্যরাত থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আকাশ ঝাপসা ছিল। স্পষ্টভাবে রানওয়ে না দেখতে পেরে পাঁচটি ফ্লাইট অবতরণ করতে পারেনি বিমানবন্দরে। পরে ফ্লাইটগুলোর মধ্যে চারটি চট্টগ্রামের হযরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চলে যায়। একটি ফ্লাইট কলকাতা বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ঘন কুয়াশায় রাত সাড়ে ৩টা থেকে ফ্লাইট ওঠা-নামায় সমস্যা দেখা দেয়। সকাল ৯টার পর রানওয়ে দৃশ্যমান হলে ফ্লাইটগুলো ঢাকায় ফিরে আসে।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, শীত মৌসুম শুরুর পর শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রায় প্রতিদিনই ফ্লাইট ওঠা-নামা বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে ফ্লাইট শিডিউল ঠিক রাখতে পারছে না বিমান সংস্থাগুলো।

কিশোরগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগসহ দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের উপর দিয়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এ অবস্থা আরও কয়েকদিন থাকতে পারে। বুধবার (২৪ জানুয়ারি) দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ।

এদিকে, হাঁড় কাঁপানো শীত আর ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত সারাদেশের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। প্রয়োজন ছাড়া কেউই ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। ব্যহত হচ্ছে নৌয, সড়ক পথে যান চলাচল। শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা।

অপর দিকে ঠান্ডায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষজন। শীত উপেক্ষা করে বাড়ী থেকে বের হলেও কাজ পাচ্ছে না অনেকে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সুর্যের দেখা মিলছে না। দিনের অধিকাংশ সময় থাকছে মেঘাচ্ছন্ন। এ সময় উওরীয় হিমেল হাওয়ায় ঠাণ্ডার তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। শীত ও কনকনে ঠান্ডায় হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডায়রিয়া,নিউমোনিয়া,শ্বাসকষ্ট, সর্দি কাশিসহ-শীতজনিত রোগীর সংখ্যা।

এদিকে পঞ্চগড়ে বুধবার সকাল ৯ টায় সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস। সকালের দিকে দেশের চার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কথা বলেছিল আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. হাফিজুর রহমানজানান, সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আজ উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়, ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে এ তাপমাত্রা গতকালের চেয়ে বেড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল সিরাজগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গায়, ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটা ছিল এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।

ঘন কুয়াশায় ঢাকা দিনাজপুরসহ উত্তরের জনপদ। কনকনে ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের মানুষ। বুধবার (২৪ জানুয়ারি) দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জেলা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান আবহাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় রাস্তায় কমেছে মানুষের চলাচল। উষ্ণতার আশায় কেউ কেউ আগুন জ্বালিয়ে শরীর গরম করে নিচ্ছেন। আবার কেউ ভিড় জমাচ্ছেন চায়ের দোকানে। দূরপাল্লার গাড়িগুলো চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। দিনের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া ও নিম্ন আয়ের মানুষ। একদিকে আলু, রসুন ও বোরো ধানের বীজতলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে কৃষক।

এদিকে ঘন কুয়াশার চাদড়ে যেন ঢাকা পড়েছে হিলি। সকাল থেকে বৃষ্টির মত কুয়াশা ঝড়ছে ঘনকুয়াশায় ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। আজ হিলিতে সর্বনিন্ম তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। গতকাল ছিল ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

চুয়াডাঙ্গায় বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। হাড়কাঁপানো শীতে নাজেহাল অবস্থা খেটে খাওয়া মানুষ, শিশু ও বয়োবৃদ্ধের। শীতে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছে না দিনমজুররা। শীতের প্রকোপে জেলার সব মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, আজ বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের সর্বনিম্ন ও মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল।

কুড়িগ্রামে তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেলেও কমেনি শীতের দাপট। বইছে মৃদু শৈত্য প্রবাহ। হিমেল হাওয়ায় কাবু হয়ে পড়েছে সমগ্র কুড়িগ্রাম। কনকনে ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। এই বৈরী আবহাওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৫ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা গতকাল ছিল ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় হালকা বা গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

শৈত্যপ্রবাহের বিষয়ে বলা হয়েছে, কিশোরগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা কিছু কিছু জায়গা থেকে প্রশমিত হতে পারে।

সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।

এদিকে আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়া। তবে একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা বেড়েছে প্রায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) চুয়াডাঙ্গা ও সিরাজগঞ্জে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

বেড়েছে রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রাও। বুধবার ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বেড়ে হয়েছে ১২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার যা ছিল ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে, টাঙ্গ‌াইলে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর গভীর রা‌তে পরপর দুইটি ট্রাক বিকলের ফ‌লে টোল আদায় বন্ধ থাকা এবং ঘন কুয়াশার কার‌ণে মহাসড়‌কে যানজটের সৃ‌ষ্টি হ‌য়ে‌ছে। এতে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়‌কে প্রায় ১০ কি‌লো‌মিটার এলাকাজু‌ড়ে কোথাও যানজট ও ধীরগ‌তি‌তে প‌রিবহন চলাচল কর‌ছে।

বুধবার (২৪ জানুয়ারি) ভোররাত থে‌কেই বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থেকে মহাসড়‌কের এলেঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট ও ধীরগতিতে পরিবহন চলাচল কর‌ছে।

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. লিটন মিয়া বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর রাতে দুইটি ট্রাক বিকলের পর দুই দফায় টোল আদায় বন্ধের কারণে মহাসড়কে পরিবহন ধীরগতিতে চলাচল করছে। মহাসড়কে পরিবহনের ধীরগতি কমিয়ে আনতে কাজ করা হ‌চ্ছে।

মন্তব্য করুন