বান্দরবান প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৩০ জুন, ২০২৪, ০১:৩০ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

ভালো ফলন ও দাম পাওয়াই খুশি পাহাড়ের কৃষক

আনরসের ঘ্রানে পুরো পাহাড়

বাগান থেকে সংগ্রহ করা আনারস বিক্রির জন্য সাজাচ্ছে বিক্রেতা লালপিন বম। গতকাল সকালে বেথনী পাড়া সড়কের তোলা। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

পার্বত্য অঞ্চলের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। এখানে উৎপাদিত যে কোনো ফল মানেই বাড়তি স্বাদ আর সুস্বাধু। আর নির্ভেজালতো বটেই। এর মধ্যে আনারস অন্যতম। প্রতিটি পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে এখন শোভা পাচ্ছে পাঁকা আনারসের ঘ্রাণ। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এই বছর পাহাড়ের আনারস চাষ করে দারুণ সাফল্য পেয়েছে বান্দরবানের আনারস চাষিরা। আকারে বড় ও খেতে সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হচ্ছে বান্দরবানে উৎপাদিত আনারস। উর্বর মাটিতে বিষমুক্ত আনারস চাষ করে ভালো ফলন ও  দাম ভালো পাওয়াই খুশি পাহাড়ের কৃষক।

প্রতি বছর মার্চ-এপ্রিল মাসে জমি বা পাহাড় প্রস্তুত করে লাগানো হয় আনারসের চারা। সারিবদ্ধভাবে আনারসের চারা রোপনের পর পরিষ্কার করা হয় আগাছা। বছর পেরিয়ে মে মাসের দিকে পরিপক্ব হয় এবং জুন মাসে বিক্রির উপযোগী হয় প্রতিটি আনারস। সেসময় পাহাড়ের ভাজে পাহাড়ি কৃষকরা দলবেঁধে মাথায় থুরুং নিয়ে বাগান থেকে বিক্রয় উপযোগী  আনারস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পাড় করেন চাষিরা। সংগ্রহ করা আনারস কেউ বিক্রি করেন স্থানীয় বাজারে আবার অনেকেই নিজের বাগান থেকে বিক্রি করে দেন। এসময় আনারসের বাগানে আশপাশে ঘুরতে থাকেন পাইকারি ক্রেতারা। তাছাড়া বান্দরবানে ক্রমে বাড়ছে আনারসচাষী ও নতুন নতুন জমিতে চাষের পরিধি। এবার বান্দরবানে আনারসের বাম্পার ফলন হওয়াই স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে সুস্বাদু পাহাড়ি এই আনারস।

কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, গেল বছরে জেলায় ৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে উৎপাদিত হয়েছে ৯৭ হাজার মেট্রিক টন আনারস।  চলতি বছর ৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৯ হাজার মেট্রিক টন। এবার পাহাড় জুড়ে উৎপাদিত হচ্ছে জায়ান্ট কিউ নামে আনারস।

বান্দরবানে রোয়াংছড়ি, রুমা ,থানচি, চিম্বুক, লাইমি পাড়া, ফারুক পাড়া, গেৎসমনি পাড়াসহ সবখানে একই চিত্র। পাহাড়ে ভাঁজে ভাঁজে এখন শোভা পাচ্ছে পাঁকা আনারস। চা্রিদিকে আনারসের ঘ্রানে মৌ মৌ করছে পুরো পাহাড়। সেসব পাকা আনরস ছিড়তে নারী-পুরুষ ব্যস্ত সময় পাড় করছেন।  বান্দরবান- রুমা-থানচি –চিম্বুক সড়কের পাশে এখন শুধু দেখা মিলছে পাঁকা আনারস। কয়েক ফুট পাহাড় নীচ থেকে মাথায় থ্রুং করে আনারস সংগ্রহ করে এক স্থানে জড়ো করছেন। কেউ বাগান থেকে ছিড়ে সড়কের পাশে সাজিয়ে বিক্রি করছেন। আবার অনেকেই স্থানীয় বাজার এবং সেই পাকা আনরস চাটনী বানিয়ে বিক্রি করছেন পর্যটকদের কাছে। আকারে বড় ও স্বাদে মিষ্টি থাকায় সেসব স্থানে ভীড় করছেন ক্রেতা ও পর্যটক। বড় সাইজের প্রতি জোড়া আনারস বাজারে বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। মাঝারি গুলো ৫০ থেকে ৮০ টাকা এবং ছোট আনারস জোড়া বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা। বাজারে চাহিদা থাকায় ও ভালো দামে বিক্রি করতে খুশি পাহাড়ি কৃষক।

বেথনি পাড়া সড়কের পাশে দোকান বসিয়ে পাকা আনারস বিক্রি করছেন লালপিন বম। তিনি বলেন, খারাপ পরিস্থিতি থাকলেও এবার আনারস ভালো ফলন হয়েছে। আর বাজারের চাহিদা থাকায় বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছি।

গেসমনি পাড়া ক্ষুদ্র নারী ব্যবসায়ী ইলেন বম বলেন, চাষিদের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা দিয়ে কয়েকটি আনারস বাগান কিনেছি। শহরে যেতে হয় নাহ বাগান থেকে বসে বসে বিক্রি করে ভালোই দাম পাচ্ছি। সাইজে বড় আর মুল কথা হল ফরমালিনমুক্ত ও মিষ্টি সুস্বাদু। 

বান্দরবানে কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক এস.এম শাহনেয়াজ জানান, বান্দরবানে রুমা, থানচি রোয়াংছড়ি সদরসহ সেসব স্থানে পাহাড়ের কিউ জায়েন্ট নামে আনারসে চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাইজে বড় ও মিষ্টি হওয়াই ক্রেতারাও কিনে নিয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় বাজারে চাহিদা মিটিয়ে দেশে বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ হচ্ছে পাহাড়ে এই আনারস। আর যেসব আনারস সরক্ষণে ব্যবস্থা নাই সেসব আনারসের জুস তৈরী করা প্রসেসিং চলছে। যাতে করে চাষিরা ফলনের পাশাপাশি জুসের ক্ষেত্রেও লাভবান হয়। আর গত বছর তুলনায় এই বছর আনারস ফলন বাড়বে বলে আশা করছি। 

মন্তব্য করুন