বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৩০ জুন, ২০২৪, ১২:১৪ এ এম

অনলাইন সংস্করণ

বাগেরহাটের কাঠের ঘর যাচ্ছে ইউরোপে

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

বাগেরহাট থেকে ইউরোপের দেশ বেলজিয়ামে রপ্তানি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশি কাঠের বাড়ি। এই বাড়ির কাঠামো, দেয়াল, দরজা-জানালা এমনকি ছাদও কাঠের তৈরি। নান্দনিক, আরামদায়ক ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বিশ্বের বহু দেশে কাঠের তৈরি বাড়ির চাহিদা বেড়েছে। বিশেষ করে পার্ক, রিসোর্ট, কটেজে এমন স্থাপনার কদর ব্যাপক। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এবার ইউরোপে সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি বাড়ি রপ্তানি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠান।

ইউরোপের দেশ বেলজিয়াম থেকে চলতি বছরের প্রথম দিকে ১২০টি বসতবাড়ি তৈরির অর্ডার পান বাগেরহাট বিসিক শিল্পনগরীর উদ্যোক্তা মোস্তাফিজ আহমেদ। বসতবাড়ি তৈরির উদ্যোগ নেয় তার প্রতিষ্ঠান ন্যাচারাল ফাইবার। প্রথমবারের মতো নিজ দেশের পণ্য ইউরোপের বাজারে রপ্তানিতে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে খুশি শ্রমিকরা। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন বাজার ও কর্মসংস্থান, আসছে বৈদেশিক মুদ্রা। 

এসব বাড়ি তৈরি হচ্ছে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের প্রত্যন্ত গ্রাম কররীতে। সেখানকার ‘ন্যাচারাল ফাইবার' নামের কারখানাটি বেলজিয়ামের জনপ্রিয় বোটানিক্যাল গার্ডেন ও চিড়িয়াখানা ‘পাইরি ডাইজা’র জন্য এসব ঘর তৈরি করছে। আসবাবসহ প্রাথমিকভাবে ১১০টি ঘরের ক্রয়াদেশ পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

সরেজমিনে দেখা যায়, বাগেরহাটের সদর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম কররীতে নিজস্ব কারখানায় তৈরি করা হচ্ছে কাঠের এসব বসতবাড়ি। শ্রমিকদের মধ্যে কেউ তৈরি করছেন বসতঘরের দরজা জানালা, কেউ ফ্রেম আবার কেউ তৈরি করছেন দেয়াল।

সবশেষে শ্রমিকদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় রং ও পালিশের মাধ্যমে শেষ করা হচ্ছে নান্দনিক ও পরিবেশবান্ধব কাঠের বসতবাড়িগুলো। প্রথমে কাঠ কেটে ও সাইজ করে পুরো বাড়িটি তৈরি করেন শ্রমিকরা। এই ঘরটি ১১ মিটার লম্বা এবং চওড়া সোয়া ৪ মিটার। সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি। এরপর বিভিন্ন অংশকে ছোট আকারে খণ্ড খণ্ড করা হয়। এর ফলে পুরো বাড়িটিকে স্বল্প স্থানে পরিবহন করা সহজ হয়ে যায়। পরবর্তীতে এই খণ্ডাংশগুলো জুড়ে দিলে সহজেই যে কোনো জায়গায় স্থাপন করা যায় এই বাড়িগুলো।

কাঠমিস্ত্রি মোজাহিদ বলেন, আমাদের প্রথমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারপরে ডিজাইন দেখে সম্পূর্ণ একটি বসতঘর তৈরি করেছি। এরপর কোম্পানি ও বিদেশি লোকজন দেখে পছন্দ করছে। এখন আমরা পুরোদমে কাজ শুরু করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রতিটি বসতঘর তৈরি করতে এক সপ্তাহ সময় লাগে। আমাদের বসত তৈরি করতে প্রায় দুইশ শ্রমিক কাজ করছে।

কারখানার শ্রমিক শরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা আগে কখনো এই ঘর তৈরি করিনি। এখন দেখছি খুবই সুন্দর হয়েছে ঘরগুলো। সম্পূর্ণ কাঠ দিয়ে এভাবে ঘর তৈরি করা যায় কখনো ভাবতেও পারেনি।

সাইফুল নামের অপর এক শ্রমিক বলেন, আমাদের হাতে তৈরি কাঠের ঘর বিদেশে যাচ্ছে, এটা আমাদের জন্য গর্ব। আমরা এই ঘর তৈরি করতে পেরে আনন্দিত।

ইউরোপের অন্য দেশেও এমন পাঠানোর আলাপ চলছে জানিয়ে মোস্তাফিজ আহমেদ বলেন, ঘরের একেকটি অংশ আলাদা করে কনটেইনারে মাধ্যমে বেলজিয়াম পাঠানো হবে। তাঁদের কর্মীরা সেখানে গিয়ে ঘর অ্যাসেম্বল (সাজিয়ে) করে দিয়ে আসবেন। বর্তমানে ঘর তৈরির জন্য ৯০ জন দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিক কাজ করছেন। আরও শতাধিক শ্রমিক তাঁদের দরকার।

বাগেরহাট ন্যাচারাল ফাইবার এর কনসালটেন্ট মো. মনিরুজ্জামান মোল্লা শাহিন বলেন, সম্পূর্ণ লোকাল কাঠ মেহগনি দিয়ে তৈরি বসতঘর যদি মোংলা দিয়ে রপ্তানি করা হতো তাহলে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হতো। আমাদের পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পাঠানো লাগে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি যাতে মোংলাবন্দর ব্যবহার করতে পারি।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের বাগেরহাটের শিল্পনগরী কর্মকর্তা ইউনুস আর রাফি বলেন, এ ধরনের পণ্য বিদেশে গেলে আমাদের দেশের সুনাম বাড়বে। দেশীয় পণ্যের বিদেশের বাজারে রপ্তানি করতে ইচ্ছুক উদ্যোক্তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে জানান বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের এই কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন