রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ৩০ জুন, ২০২৪, ০৯:৪৫ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

অনলাইন জুয়ায় অর্থপাচার বাড়ছে: সিআইডি প্রধান

ছবি: সংগৃহীত

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেছেন, অনলাইন গ্যাম্বলিং (জুয়া) এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এই জুয়ার মাধ্যমে নিয়মিত দেশ থেকে ই-মানির মাধ্যমে টাকা পাচার হচ্ছে। আইনি বাধার কারণেই ব্যবস্থা নিতে পারছে না পুলিশ।

আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদর দপ্তরে অনলাইন গ্যাম্বলিং অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। সাবমিশন অব রিসার্চ রিপোর্ট অন চ্যালেঞ্জ অব কন্ট্রোলিং ইলিগ্যাল মানি ট্রান্সফার থ্রো মোবাইল অ্যাপস: এ স্টাডি অন অনলাইন গ্যাম্বলিং শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সিআইডি প্রধান বলেন, কোনো একটি সংস্থার পক্ষে এই অনলাইন গ্যাম্বলিং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এজন্য সব সংস্থার সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, অনলাইন গ্যাম্বলিংয়ের মাধ্যমে নিয়মিত দেশ থেকে ই-মানির মাধ্যমে টাকা পাচার হচ্ছে। এটি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কোনো একটি সংস্থার পক্ষে এই অনলাইন গ্যাম্বলিং নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। অনলাইন গ্যাম্বলিং (জুয়া) নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

আইনের ধারায় নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, সিআইডিসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা ও ডিভাইস জব্দসহ অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে পারত। কিন্তু নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনে অবৈধ অর্থ পাচারের ধারায় এখন সেটি সম্ভব হচ্ছে না। আমরা সহজে কিছু করতে পারছি না। নতুন আইন হওয়ার পর অনলাইন গ্যাম্বলিংয়ের অভিযোগে কোনো মামলা হয়নি। অথচ অনলাইন গ্যাম্বলিংয়ে অবৈধভাবে অর্থপাচার বাড়ছে।

অনলাইন গ্যাম্বলিং (জুয়া) নিয়ন্ত্রণে এখনই অনলাইন গ্যাম্বলিং নিয়ন্ত্রণ আইন দরকার বলেও জানান তিনি।

কী পরিমাণ অনলাইন গ্যাম্বলিং হচ্ছে—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেন, ‘এ তথ্য আমাদের কাছে নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকেও নেই। কারো কাছে নেই। আমরা যখন কাউকে ধরি, তখন কিছু তথ্য পাই। তবে, এই মুহূর্তে আমরা দেখতে পাচ্ছি সাড়ে ছয় হাজারের উপরে অনলাইন জুয়া টিম আছে। যারা বিভিন্ন উপায়ে অপরাধ করে যাচ্ছে। ছয় হাজারের বেশি ক্রিপটোকারেন্সি আছে দেশে।

এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডি প্রধান বলেন, ‘আমাদের একটা ট্র্যাডিশনাল আইন আছে- প্রকাশ্যে যারা জুয়া খেলে, তিন বা চার তাস... এর শাস্তি ছিল ৫০/১০০ টাকা জরিমানা। কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে সেটি অনলাইন জুয়া, যা অনলাইন বেইজ অপরাধ। এটা নিয়ন্ত্রণে কিন্তু দেশে আলাদা কোনো আইন নেই। যে আইনটা ধরে আমরা কাজ করেছি, সেটি হলো সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট। সেটিতে বলা হয়েছে, অবৈধ ই-মানি ট্রানজেকশন। এই ধারা তখন ছিল কগনিজেবল। এখন সেটি ননকগনিজেবল করা হয়েছে। অর্থাৎ প্রমাণের আগে পুলিশ কাউকে ধরতে না পারায় বিষয়টি এখন আমাদের জন্য অনেক কঠিন।

এই আইনের সংশোধন বা অনলাইন জুয়া নিয়ন্ত্রণে আলাদা আইন করার বিষয়ে পুলিশের প্রস্তাব রয়েছে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি এটা দ্রুত সংশোধন করা হোক। পুলিশ সদরদপ্তর থেকে প্রস্তাবনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। যতটুকু জানি যে, এটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে যায়নি। আমরা চাই এটার দ্রুত বাস্তবায়ন, যেন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি।

বাংলাদেশে কী পরিমাণ মানুষ অনলাইন জুয়ায় আসক্ত বা জুয়া খেলছে, এর মাধ্যমে কী পরিমাণ টাকা পাচার হচ্ছে— এ প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত আইজিপি বলেন, ‘কতজন লোক জুয়া খেলছে, তারা কারা? যারা জুয়া অর্গানাইজ করছে তারা কারা? বাংলাদেশে এর উপরে কোনো রিসার্চ নেই, ডাটা নেই। এজন্যই চাচ্ছি একটা ডাটা সেন্টার হোক।

অনলাইন বেইজ, ট্রেড বেইজে আন্ডার ও ওভার ইনভয়েজের মাধ্যমে যে পরিমাণ টাকা পাচার হচ্ছে, ই-মানির মাধ্যমে টাকা পাচার হচ্ছে, এর কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য আমাদের কারো কাছে নেই। ডাটাবেজ থাকলে এসব জানা সহজ হতো।

মন্তব্য করুন