ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১১ জুন, ২০২৪, ০৮:০২ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাৎ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ

ছবি: সংগৃহীত

অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্কুলের বরাদ্দের টাকা আত্মসাতে গুলসান আরা বেগম নামে এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে দুদকে অভিযোগ করেছে আব্দুর রশীদ নামে এক ব্যক্তি। গুলসান আরা বেগম ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের বোচাপুকুর পোকাতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত রয়েছে। আর আব্দুর রশীদ ওই এলাকার মৃত খাদেম আলীর ছেলে।

গত সোমবার জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়ামে রুখব দুর্নীতি গড়ব দেশ, হবে সোনার বাংলাদেশ স্লোগানে আয়োজিত গণশুনানিতে দুর্নীতি দমন কমিশনের সামনে ওই প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উত্থাপিত হয়। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন দশ দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসককে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলে। গত রোববার (৯ জুন) দ্বিতীয় শুনানিতে তাদের উভয় পক্ষকে ডাকা হয়। এবং সোমবার (১০) দুইজন উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার রবিউল আলম ও মুমিনুল ইসলাম সরেজমিনে তদন্তের জন্য ওই স্কুলে যান।

তবে তদন্তের বিষয়ে এই দুই কর্মকর্তা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

দুদকে দেওয়া সেই অভিযোগের সূত্রে জানা গেছে, বোচাপুকুর পোকাতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৪৫ সালে স্থাপিত হয়। বিদ্যালয়টির ২.৮৩ একর জমি রয়েছে। প্রধান শিক্ষিকা গুলসান আরা বেগমের স্বামীর বাড়ি পোকাতিতে হওয়ার সুবাদে তিনি এ বিদ্যালয়ে প্রায় ১৫ বছর ধরে কর্মরত আছেন।

প্রধান শিক্ষিকা বিদ্যালয়ের জমি নিজের ইচ্ছামতো চুক্তি দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করছে। এলাকার নিজস্ব লোকজন নিয়ে স্কুলের কমিটি করেন। ইতিপূর্বে জমি দাতাগণ ও ছাত্র অভিভাবকগণ অবৈধ স্কুল কমিটির অনুমোদন না দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের বরাবরে আবেদন করেন। তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মতিয়র রহমান বিদ্যালয়ের জমিতে ৪২টি কাঁঠাল গাছ, ৪টি আম গাছ, ৩টি ডাব গাছ, ও বিভিন্ন বনজ গাছ আছে বলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানান। কিন্তু বর্তমান প্রধান শিক্ষিকা বনবিভাগকে না জানিয়ে উক্ত গাছগুলোর মধ্যে কতক গাছ বিক্রি দেয়। প্রতিনিয়তই প্রধান শিক্ষিকা সরকারি নিয়মনীতি অমান্য করে আসছে বলে অভিযোগে পাওয়া যায়।

অভিযোগকারী আব্দুর রশীদ বলেন, প্রধান শিক্ষিকা ১৫ বছর ধরে একই স্কুলে থাকার সুবাদে বিভিন্ন অনিয়ম করে আসছে। তিনি ব্যক্তির স্বার্থে স্কুলের জমি ও হাট লিজ দিয়ে টাকা আত্মসাৎ করছেন। স্কুলের গাছ বিক্রি করেছে। তিনি তাঁর লোক দিয়ে রাতের অন্ধকারে কমিটি গঠন করেন। জমিদাতার কোনো নাম নেই। যারা জমি দান করেছে তাদের তিনি স্কুলে ঢুকতে দেয় না। প্রবেশ করলে বিভিন্ন হুমকি-ধামকি দেয় বলে জানান তিনি।

অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষিকা গুলসান আরা বেগম বলেন, স্কুলের কোন জমি বা হাট লিজ দেওয়ার কোন প্রশ্নেই আসে না। আর সকলের সামনে প্রকাশ্যে কমিটি করা হয়েছে। আমার নামে যেসকল অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা-বানোয়াট।

তিনি আরো বলেন, আইন অমান্য করার কোন সুযোগ আমার নাই। যদি কোনো অন্যায় করে থাকি তাহলে অবশ্যই শিক্ষা অফিস আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

আর স্কুল কমিটি সভাপতি ও নারগুন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সেরেকুল ইসলাম বলেন, গুলসান আরা বেগম চাকুরি আর বেশি দিন নেই। তাকে হয়রানি করার জন্যই আব্দুর রশীদ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করছেন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুর্নীতি বা টাকা আত্মসাতের কোনো সুযোগ নেই। স্বচ্ছভাবেই কমিটি করা হয়েছে। প্রধান শিক্ষিকাকে মানসিকভাবেই দুর্বল করার জন্য তিনি মামলা ও অভিযোগ দিয়ে আসছেন।

এব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দ মো: মোকাদ্দেস ইবনে সালাম জানান, প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। তা তদন্তের জন্য দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া অবধি এব্যাপারে কোন কিছুই বলা যাবে।

মন্তব্য করুন