নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারী, ২০২৪, ০২:১০ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

কনকনে ঠান্ডায় কাঁপছে জনজীবন

ঘন কুয়াশার সাথে হিমেল হাওয়া আর কনকনে শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। গত কয়েকদিন যাবত শীত আর কুয়াশার সাথে সাথে বইছে মৃদু বাতাস। ঘন কুয়াশায় হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে বিভিন্ন যানবাহন। তবে, বেলা বাড়ার সাথে সাথে কমতে থাকে কুয়াশা। তীব্র শীতে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে খেটে খাওয়া ছিন্নমূল মানুষ। শীতের মধ্যে বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আগামী বুধবার থেকে শুক্রবার দেশের বিভিন্ন জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

ঢাকার আকাশে রয়েছে মেঘের বিচরণ। এ অবস্থায় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সোমবারের (১৫ জানুয়ারি) তুলনায় মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। তবে বেড়েছে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। ঢাকায় আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সোমবার ছিল ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, আগামী বুধবার থেকে শুক্রবার দেশের বিভিন্ন জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হবে। এ সময় আকাশ মেঘলা থাকবে। দেশের পশ্চিম ও দক্ষিণ–পশ্চিম অঞ্চলের জেলাগুলোর মধ্যে যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, পাবনাসহ অন্তত ৪০ জেলায় তুলনামূলক বৃষ্টি বেশি হতে পারে৷

এদিকে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ছাড়া দেশের কোথাও শৈত্যপ্রবাহ নেই বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান। তিনি বলেন, বর্তমানে শ্রীমঙ্গল ছাড়া দেশের আর কোথায় শৈত্যপ্রবাহ নেই। শ্রীমঙ্গলে বর্তমানে তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকায় বর্তমানে তাপমাত্রা ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

শ্রীমঙ্গল আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক বিপুল চন্দ্র বলেন, উত্তরের হিমেল হাওয়া থাকার কারণে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা কমে গেছে৷ তাই শীত অনুভূত হচ্ছে বেশি।

বিপুল চন্দ্র বলেন, জেলাজুড়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। এই অবস্থা আরও ২ থেকে ৩ দিন অব্যাহত থাকতে পারে৷ চলতি মাসের শেষের দিকে আরও একটি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কন কনে ঠান্ডায় কাঁপছে দিনাজপুর। কয়েকদিন ধরে চলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। হাড় কাঁপানো শীতের সঙ্গে বেড়েছে কুয়াশার দাপট। ৭ দিন ধরে দেখা মিলছে না সূর্যের। হিমেল বাতাস আর শীতে কাবু হয়ে পড়েছে মানুষ।

জেলা আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) দিনাজপুরে সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বাতাসের আর্দ্রতা ৯৬ শতাংশ। জেলায় চলতি শীত মৌসুমে সর্বনিম্ন ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে জেলায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে।

দিনাজপুর জেলা সিভিল সার্জন এএইচএম বোরহানুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শীতজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এজন্য শিশু ও বয়স্কদের ঠান্ডা থেকে দূরে রাখাসহ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে শিশু ও বয়স্কদের বের না হওয়াই ভালো।

পঞ্চগড়ে ঘন কুয়াশার আর হাড় কাঁপানো কনকনে ঠান্ডায় শ্রমজীবী ও নিম্নআয়ের মানুষ পড়েছে বিপাকে। রাতে বৃষ্টির ফোঁটার মতো পড়ছে কুয়াশা। ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়েছেন নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ। আজ মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক আট ডিগ্রি সেলিসিয়াস রেকর্ড করে তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ্ বলেন, ‘টানা পাঁচ দিন ধরে তেঁতুলিয়া এবং এর আশপাশে মাঝারি থেকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের পর সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পায়। গতকাল সোমবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন ১০ দশমিক দুই ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আর আজ মঙ্গলবার তাপমাত্রা ১০ দশমিক আট ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে।’

এদিকে শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও দেশের বিভিন্ন জেলায় শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। টানা ১১ দিন পর ঘনকুয়াশা কিছুটা কমলেও হিমশীতল বাতাসের সঙ্গে কনকনে ঠান্ডার দাপট কমেনি উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে। তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আজ সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে কৃষি বিভাগ।

কুড়িগ্রামে ঘনকুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়ার কারণে জেঁকে বসেছে শীত। টানা ৯ দিন দেখা যায়নি সূর্যের মুখ। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে শিশু ও বয়স্করা আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগব্যাধিতে। কৃষি কাজে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। আলু ক্ষেতে ছত্রাকের আক্রমণের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র জানান, মঙ্গলবার ভোর ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গাইবান্ধায় শীতের তীব্রতা বেড়েই চলছে। পৌষের শেষ সময়ে এসে ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়ায় শীতের প্রভাব পড়ছে এ জেলার নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে। কনকনে শীতে চরম বিপাকে পড়েছে শিশু ও বয়স্করা। চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী এলাকার নিম্ন আয়ের মানুষদেরও শীতে কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। গাইবান্ধার জেলা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতেও বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা।

সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মঙ্গলবার সকালে রংপুরে রেকর্ড করা হয়েছে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অঞ্চলে সূর্যের দেখা মিলছে না ৫ দিন ধরে। এর ফলে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া কর্মজীবী মানুষ পড়েছে দুর্ভোগে। ঠাণ্ডার কারণে বাড়ছে হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। পাশাপাশি তীব্র শীতে আগুন পোহাতে গিয়ে গত ১০ দিনে বিভাগের বিভিন্ন জেলা খেকে আসা দুজনের মৃত্যু হয়েছে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন ২০ জন রোগী।

এদিকে চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান জানান, আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় চুয়াডাঙ্গার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ফরিদপুরে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলছে। আজ মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) সকাল থেকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে ঘরবাড়ি-রাস্তাঘাট সবকিছু। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশা হালকা কমলেও দেখা মিলছে না সূর্যের। শীতের তীব্রতাও কমছে না।

ফরিদপুর আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষক জাহানারা খাতুন জানান, আজ সকাল ৯টায় ফরিদপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক আট ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে আজ তাপমাত্রা এর নিচে নামবে না।

মন্তব্য করুন