নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১০:৩৮ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ক্যাম্পাসে প্রবেশ

বুয়েটে সব প্রবেশপথে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা

ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) মধ্যরাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রবেশের প্রতিবাদ জানিয়ে ছয় দফা দাবি দিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

আজ শুক্রবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিকেলে শুরু করা আন্দোলন রাত ৮টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা। আগামীকাল শনিবার সকাল ৮টা থেকে পুনরায় অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে তারা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো—‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্পষ্ট বিধিমালা লঙ্ঘনের দায়ে ২৮ মার্চের মধ্যরাতে রাজনৈতিক সমাগমের মূল সংগঠক পুরকৌশল বিভাগের ইমতিয়াজ রাব্বিকে বুয়েট থেকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং হল বাতিল করতে হবে; ইমতিয়াজ রাব্বির সঙ্গে বুয়েটের বাকি যে সকল শিক্ষার্থীরা জড়িত ছিল তাদের বিভিন্ন মেয়াদে হল এবং টার্ম বহিষ্কার করতে হবে; বহিরাগত রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ যারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করল তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা, তারা কেন কীভাবে প্রবেশ করার অনুমতি পেল এই ব্যাপারে সুস্পষ্ট সদুত্তর এবং জবাবদিহি বুয়েট প্রশাসন কর্তৃক আসতে হবে

এছাড়া, ১ নং এবং ২ নং দাবি আগামীকাল সকাল ৯টার মধ্যে বাস্তবায়ন করা না হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমানকে পদত্যাগ করতে হবে; ক্যাম্পাসে মধ্যরাতে বহিরাগতদের প্রবেশের কারণে আমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত এর প্রতিবাদ হিসেবে আগামী ৩০ ও ৩১ মার্চের টার্ম ফাইনালসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম বর্জন করছি এবং আন্দোলনরত বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে কোনো রকম হয়রানিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না—এই মর্মে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতে হবে।’

জানা গেছে, ২৮ মার্চ দিবাগত রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি, দপ্তর সম্পাদকসহ কয়েকজন নেতা বুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। যাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশে সহায়তা করেন বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বি। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ার পর বুয়েটে এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে নতুন করে রাজনীতি শুরুর পায়তারা হিসেবে দেখছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কর্মসূচির প্রতিবাদে দিনভর বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলেন, সন্ধ্যায় উপাচার্য এসে আমাদের আংশিক দাবি মানার মৌখিক আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু আমাদের দাবি ছিল ৩০ মার্চ সকাল ৯টার মধ্যে আমাদের সব দাবি মেনে নিতে হবে। তবে আমাদের সব দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে।

তারা আরও বলেন, আমাদের সব দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়ে লিখিত দিতে হবে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালকের (ডিএসডব্লিউ) দায়িত্বে অবহেলা করার দায় স্বীকার করতে হবে। তিনি দায়িত্ব পালন তো করেনইনি, উল্টো বলেন, ‘রাত ৩টায় তোমাদের নিরাপত্তা দেওয়া আমার কাজ না!’

তারা জানান, ঘোষিত ১ ও ২ নম্বর দাবি আগামীকাল সকাল ৯টার মধ্যে মেনে না নিলে ডিএসডব্লিউর পদত্যাগের দাবি ছিল। কিন্তু আমাদের সেটি পরিবর্তন হয়ে দায়িত্ব অবহেলার জন্য তার পদত্যাগ করতে হবে। প্রথম দুটি দাবি পূরণ শর্ত নয়। আগামীকাল সকাল ৮টায় বুয়েটের সব প্রবেশপথে আমরা অবস্থান নেবো। আগামীকাল সকালে অবস্থান নিতে হবে, এ জন্য আজ আপাতত আন্দোলন স্থগিত করছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্যপ্রসাদ মজুমদার বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা মিটিংয়ে বসেছি। মিটিংয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সেটি আমরা পরবর্তীতে জানাবো।

এর আগে ২৮ মার্চ রাত ১টার দিকে বুয়েটে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা প্রোগ্রাম করেন। এর প্রতিবাদে শুক্রবার (২৯ মার্চ) বিকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। প্রতিবাদ সমাবেশে তারা এসব দাবি উত্থাপন করেন এবং ছয় দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে বলে জানান তারা।

এ সময় তারা ‘ছাত্ররাজনীতির ঠিকানা এই বুয়েটে হবে না’, ‘বুয়েট থেকে করব ছাড়া, পলিটিকসে যুক্ত যারা’ এমন বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা।

মন্তব্য করুন