রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩ জুন, ২০২৪, ০৯:২৩ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

র‍্যাব-সাংবাদিক পরিচয়ে ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৫

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

র‍্যাব ও সাংবাদিক পরিচয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গাজীপুরের শ্রীপুরের সেলভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের বেতনের টাকা তুলে নিয়ে ফেরার পথে  সাড়ে ১৯ লাখ টাকা ডাকাতি হয়। এ ঘটনায় হোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। গত বুধবার রাতে ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আজ বৃহস্পতিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থা আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার আরাফাত ইসলাম।

তিনি বলেন, গত ৬ জুন বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুরের সেলভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের তিন কর্মকর্তা একটি প্রাইভেট ব্যাংক থেকে কারখানার শ্রমিকদের বেতন, ঈদ বোনাস ও পরিবহন খরচের সাড়ে ১৯ লাখ টাকা নিয়ে প্রাইভেটকার দিয়ে কারখানায় ফিরছিলেন। তাদের বহনকারী গাড়িটি কারখানার কাছাকাছি আসলে একটি গাড়ি তাদের গাড়ির গতিরোধ করে।

এসময় র‌্যাবের জ্যাকেট পরিহিত কয়েকজন ব্যক্তি অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে  কর্মকর্তাদের অপহরণ করে গাড়িতে তুলে নিয়ে মারধর করে। গাজীপুর-ময়মনসিংহ সড়কের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করতে থাকে। পরবর্তীতে সন্ধ্যা ৬টার দিকে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গাজীপুরের হোতাপাড়া এলাকায় তিনজনকে নামিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়।

এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তে নেমে রাজধানীর রামপুরা ও উত্তরা এবং গাজীপুরের টঙ্গীতে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- চক্রের মূলহোতা  হামিম ইসলাম (৪৫), মো. জিন্নাহ মিয়া (২৭), মো. আমিন হোসেন (৩০), মো. রুবেল ইসলাম (৩৩), মো. আশিকুর রহমান (৪২)। এ সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস, দুটি খেলনা পিস্তল, দুইটি হাতে তৈরি র‌্যাব জ্যাকেট, দুটি র‌্যাবের ক্যাপ, ১টি হ্যান্ডকাফসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। আসামিদের কাছ থেকে ১ লাখ ৬২ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার ডাকাত সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কমান্ডার আরাফাত বলেন,  ডাকাত দলটির প্রধান হামিম। এই ডাকাত দলে ১০ থেকে ১২ জন সদস্য রয়েছে। এছাড়াও গ্রেপ্তারকৃতরা ডাকাতি কাজে মাইক্রোবাসসহ বিভিন্ন যানবাহন ব্যবহার করতো বলে জানা যায়। ৩ থেকে ৪ বছর  আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে গাজীপুর, টঙ্গী, উত্তরাসহ রাজধানীর পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতির করত। ডাকাতির কৌশল হিসেব বিভিন্ন সময় নিজেদেরকে র‌্যাব, পুলিশ, ডিবি, সাংবাদিক ও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া সদস্য পরিচয় প্রদানসহ ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত গাড়িতে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন বাহিনীর লোগো সম্বলিত স্টিকার ব্যবহার করত। দলের কিছু সদস্য ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নজরদারি করে। বেশি অর্থ উত্তোলনকারী ব্যক্তিকে টার্গেট করে বাহিরে অবস্থানকৃত চক্রের অন্য সদস্যদেরকে জানিয়ে দিতো। পরবর্তীতে সুবিধাজনক  স্থানে টার্গেটকৃত ব্যক্তির গাড়ির গতিরোধ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। মারধর করে তার কাছে থাকা টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে নির্জন স্থানে ফেলে পালিয়ে যেত। তারা মাসে ২ থেকে ৩টি ডাকাতি করত।

চক্রটি পবিত্র ঈদ-উল-আযহাকে সামনে রেখে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভুয়া পরিচয় দিয়ে কয়েকটি সম্ভাব্য স্থানে ডাকাতির পরিকল্পনা করছিল বলে জানা যায়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উৎসবের সময়ে আর্থিক লেনদেন বেশি হয়। অনেকেই প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি প্রয়োজনে টাকা লেনদেন করেন। এই সময়ে আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি অনেক বেশি থাকে। ব্যাংকেও আমাদের গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। পাশাপাশি আমাদের অনুরোধ থাকবে প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজেদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হলে এমন ঘটনা এড়ানো যাবে।

ঈদকে কেন্দ্র করে র‍্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি রয়েছে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গরু বিক্রি করতে আসা বেপারীদের উদ্দেশ্য র‍্যাবের এই মুখপাত্র বলেন, আমরা অনুরোধ করবো বড় অংকের টাকা বহনের সময়ে নিকটস্থ র‍্যাবকে জানালে জানালে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

 

মন্তব্য করুন