লালমনিরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৮ মার্চ, ২০২৪, ০৫:২২ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

রংপুরে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী গরু-মহিষের গাড়ি

ছবি সংগৃহীত

গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও রংপুর অঞ্চলের জনপ্রিয়  এক সময়ের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল গ্রাম- বাংলার জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী গরু ও মহিষের গাড়ি  আজ তা বিলুপ্তির পথে। নিত্য  নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তির ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ঘটায়।  হারিয়ে যাচ্ছে অতীতের এই  সব চির -চেনা ঐতিহ্যবাহী গরু ও মহিষের গাড়ি। 

 সুপ্রাচীন খ্রিষ্টজন্মের ১৫ থেকে ১৫ শত বছর আগে সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে গরু ও  মহিষের গাড়িতে চলাচল  প্রচলন ছিল।গ্রাম বাংলায় এ ঐতিহ্য আজ তা বিলুপ্তির পথে। কুড়িগ্রামের চিলমারীর বিখ্যাত ভাওয়াইয়া শিল্পী মরহুম আব্বাস উদ্দিন গরু ও মহিষ এর গাড়ির ঐতিহ্য কে ধরে রাখতে তিনি,ওকি গাড়িয়াল ভাই, হাকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে। এই গান টি তিনি গেয়ে অনেক সুনাম অর্জন করেছেন। 

এক সময় বাংলাদেশের উত্তরঅঞ্চলের পল্লী এলাকার জনপ্রিয় বাহন ছিল মহিষ এর গাড়ি। বিশেষ করে এই রংপুর জনপদে কৃষি ফসল ও মানুষ পরিবহনের জনপ্রিয় বাহন ছিল এই মহিষের গাড়ি। যুগের পরিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এই বাহন। এখন শুধুই স্মৃতি।  

মাঝে মধ্যে প্রত্যন্ত এলাকায় দু-একটি মহিষ এর গাড়ি চোঁখে পড়লেও শহরাঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না। সে কারণে শহরের ছেলে-মেয়েরা তো দূরের কথা। বর্তমানে গ্রামের ছেলে-মেয়েরাও এ বাহনের গাড়ি শব্দটির সঙ্গে পরিচিত নয়। 

প্রায় ২ যুগ আগেও মহিষের গাড়িতে চড়ে বর-বধূ যেত। মহিষ ও গরুর গাড়ি ছাড়া বিয়ের কল্পনাও করা যেত না। বিয়ে বাড়ি বা মালামাল পরিবহনে এসব বাহন ছিল একমাত্র পরিবহন। মহিষের গাড়ির চালককে বলা হয় গাড়িয়াল। সেই চালককে উদ্দেশ্য করে রচিত হয়েছে ২ টি গান‘ ‘আস্তে বোলাও গাড়ি, আরেক নজর দেখিয়া ন্যাং মুই দয়ার বাপের বাড়িরে গাড়িয়াল’ এ রকম যুগান্তকারী সেই সব ভাওয়াইয়া গান। 

তবে বর্তমানে নানা ধরনের মোটরযানের কারণে অপেক্ষাকৃত ধীর গতির ওই যানটির ব্যবহার অনেক কমে গেছে। তাই এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। এখন মানুষ বিভিন্ন ধরণের প্রয়োজনীয় মালামাল বহনের জন্য ট্রাক, পাওয়ার টিলার, লরি, অটোরিকশা,  নসিমন-করিমনসহ বিভিন্ন মালগাড়ি ব্যবহার করছে। মানুষের যাতায়াতের জন্য রয়েছে মোটর গাড়ি, রেল গাড়ি, অটোরিকশা, ইজিবাইক, রিক্সা, ভ্যানসহ বিভিন্ন যান-বাহন।

ফলে গ্রামাঞ্চলেও আর চোখে পড়ে না মহিষের গাড়ি। অথচ মহিষের গাড়ির একটি সুবিধা হলো, এতে কোনো জ্বালানি লাগে না। ফলে ধোঁয়া হয় না। পরিবেশের কোনো ক্ষতিও করে না। এটি পরিবেশ বান্ধব একটি যানবাহন। আবার ধীর গতির কারণে এতে তেমন কোনো দুর্ঘটনারও আশংকা থাকে না। অথচ যুগের পরিবর্তনে আমাদের জনপ্রিয় ওই বাহন প্রচলন আজ হারিয়ে যাচ্ছে কালের অতল গর্ভে।

লালমনিরহাটের সিনিয়র সাংবাদিক এস এম জিয়া  জানান, আমাদের অতিত ঐতিহ্যের অংশ মহিষের গাড়ি। যা আজ বিলুপ্তির পথে। এ ঐতিহ্য কিছুটা গ্রামঅঞ্চলের মানুষ ধরে রেখেছে। সম্প্রতি লালমনিরহাটের সদর উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত চর অঞ্চলে সরেজমিনে গেলে বিলুপ্ত প্রায় মহিষের গাড়ি দেখতে পাওয়া যায়। চরে মানুষ ও বিভিন্ন মালামাল এখনো বহন করে চলছেন।

গাড়িয়াল আবু বক্কর জানান, চরের বুকে মহিষের গাড়ি একমাএ বাহন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কুড়িগ্রাম জেলাসহ বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের ৮ জেলায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রত্যন্ত চর অঞ্চল গুলোতে এখনো মহিষের গাড়ী, গরুর গাড়ী, মহিষের পাল, গরুর পাল, ভেড়া ও ছাগলের পাল নিয়ে।

রাঁখাল বাঁশি নিয়ে পাল ছাড়িয়ে। মনের সুখে ওকিগাড়িয়াল ভাই এর জনপ্রিয় ভাওয়াইয়া গান বাঁশির সুরে গাইছেন। তবে রাঁখালের বাঁশির সুরে প্রান জুড়িয়ে যায়। রাঁখাল ফজলু মিয়া প্রতিবেদক কে জানান, এখনো তিনি পান্তা ভাত খেয়ে মহিষের পাল নিয়ে প্রত্যন্ত চরে গিয়ে পাল ছাড়িয়ে তার বাঁশিতে সুর তুলেন। ওকি গাড়িয়াল ভাই, হাকাও গাড়ি তুই চিলমারীর বন্দরে। 

মন্তব্য করুন