বিনোদন প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ০১:২৩ এ এম

অনলাইন সংস্করণ

বেঁচে ফিরলে যাবো তোর আসল বাড়ী জিয়ারত করতে: আসিফ আকবর

আসিফ আকবর। ছবি সংগৃহীত

সেই ২০০১ সাল থেকে এখনো দেশের সংগীতাঙ্গনে তুমুল জনপ্রিয় গায়ক আসিফ আকবর। তাকে বলা হয়ে থাকে বাংলা সঙ্গীতের যুবরাজ। ক্যাসেটের আমলে অডিওতে রাজত্ব করা এই শিল্পী সিডি, ভিসিডির যুগ পার করে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের এই যুগেও বেশ দাপুটে। নিজের মতো করেই নিয়মিত গান প্রকাশ করে চলছেন। তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকেও প্রকাশ পাচ্ছে তার গান। 
 
প্রায় ‍দুই ‍যুগ পার করা পেশাদার এই সংগীতশিল্পী ফেসবুকে বেশ সরব। প্রায় নিয়মিতই লিখেন ফেসবুকে। তার সেই লেখায় থাকে প্রতিবাদ, আবেগ, প্রেম, বিরহ সেই সাথে থাকে সামাজিক দায়বদ্ধতার কথাও। 

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) আনুমানিক সকাল ৬টার দিকে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কে সুরমা ব্রিজ সংলগ্ন মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার মতিউর রহমান হাসান ওরফে পাগল হাসান (৩৩) । তাকে নিয়ে দীর্ঘ এক স্ট্যাটাস দেন এই শিল্পী। জনপ্রিয় এই শিল্পী তার লেখা শুরু করেন ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ড সড়ক দূর্ঘটনায় আজ নিহত হলো পাগল হাসান’ এই কথা বলে। 

রূপালী বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য কন্ঠশিল্পী আসিফ আকবরের ফেসবুক হ্যান্ডেলে দেয়া স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধরা হলো- 

বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাষ্ট্রীয় হত্যাকান্ড সড়ক দূর্ঘটনায় আজ নিহত হলো পাগল হাসান। তরুন টগবগে সুনামগঞ্জের ছেলেটা গীতিকার সুরকার গায়ক হিসেবে ছিল অমিত প্রতিভার অধিকারী। মানুষ মইরা গেলে কদর বাইড়া যায়, বাইচ্চা থাকতে নিকৃষ্ট কয় মরলে শ্রেষ্ঠ পদক পায়- মূলতঃ এই গানটির মাধ্যমেই তার সঙ্গে সখ্যতা আমার। সৎ স্পষ্টবাদী বন্ধুবৎসল হাসান সিলেটী একসেন্টেই কথা বলতো। আফনে বারিত যাইবেন, ঘরে হাই কমোড লাগাইসি। নতুন ঘর বানাইসি, পানি কমলে যাইবেন। দুজনার ব্যস্ততায় আর যাওয়া হয়নি। 

মতিউর রহমান হাসান-নিজেকে পাগল হাসান নামে শুনতেই পছন্দ করতো। তার কথাবার্তা চিন্তাভাবনার দর্শন ছিল উচ্চ মার্গীয়। সে বলতো-গরীবই গরীবরে মারে! অনেক গবেষণা করে দেখলাম তার কথাই সঠিক। বাংলাদেশে তোলোরে ভাই ফুটবলের জোয়ার- এটাই ছিল তার কথা সুরে গাওয়া শেষ গান। সে ছিল আর্জেন্টিনার ক্রেজী সাপোর্টার, গানের মধ্যেও আর্জেন্টিনার প্লেয়ারের নাম বেশী ঢুকিয়েছে, তার আনন্দের কথা ভেবে টুঁ শব্দও করিনি। আরেকটা গান করে রেখেছে- পাগলও বানাইয়া সুখী হইসোনি গো প্রিয়া। তাকে বলেছি গানটা তুইই গা, আমি প্রিয়া নিয়ে আর গাইবোনা। 

একদিন বললো- ভাই কোনদিন সাগর দেখসিনা। নিয়ে গেলাম পতেঙ্গা, গভীর সাগরে চলে গেলাম স্পীডবোটে। সে কি আনন্দ তার ! সে ভাবতো খুব শক্তিশালী মানুষ আমি, ভাবতো আমাকে দিয়ে সব সম্ভব! বোকা ছেলে ! একসাথে কেরাম খেলতাম, আমাকে একটা গেম নীলে দিয়ে ভয়ে আর খেলতে চাইতোনা! অফিসে পাশের রুমে দোতারা একটা নিয়ে উদাস মনে গান গাইতেই থাকতো, আমি শুনতাম নিজের রুম থেকে। একদিন বেগমকে ফোনে বলছিলাম টাকা লাগবে, সে বাইরে বের হয়ে বুথ থেকে টাকা তুলে এনে দিয়ে বললো লাগলে আরো দিবে, আমিতো অবাক!! এরকম হাজারো স্মৃতি আমাদের। তোর মৃত্যুর খবরে অনেকদিন পর অনেক কাঁদলাম ভাই আমার, আরো অনেক কাঁদবো। দোয়া করি- মহান আল্লাহ তোর আত্মার শান্তি দিন। তোর স্ত্রী আর ছেলে দুটোকে এই শোক বইবার শক্তি দিন। আমিন।

আজ লেবানন সফরে যাচ্ছি ভাই, বেঁচে ফিরলে যাবো তোর আসল বাড়ী জিয়ারত করতে, আল্লাহর হাতে সোপর্দ। 
আমিন...

মন্তব্য করুন