জুয়েল সাদত

প্রকাশিত: ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪, ০২:৩০ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

প্রবাসীরা ভাষাটাকে টিকিয়ে রাখতে যুদ্ধরত

বাংলা ভাষা পৃথিবীর সবচেয়ে সমধুর ভাষা হিসাবে সুপরিচিত। ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী  ২৮২.৯   মিলিয়ন মানুষ বাংলা কথা বলে আবার ৩৯ মিলিয়ন মানুষের দ্বিতীয় ভাষা বাংলা। বাংলা বিশ্বের ৭ নং বৃহদ জনগোষ্ঠীর ভাষা।  বিশ্বে একমাত্র ভাষা বাংলা যাকে রাষ্ট্র ভাষা করতে জীবন দিতে হয়েছিল। জাতিসংঘ বাংলাকে আন্ত:র্জাতিক ভাষার মর্য়াদ দিয়েছিল।

বাংলা ভাষাকে আমরা কতটুকু ভালবাসি। আসলে বাংলাদেশে বাংলাভাষা সবচেয়ে অবহেলার স্বীকার। ঢাকার কোন কোন এলাকায় গেলে মনে হবে আপনি বাংলাদেশে নাই। সব সাইন ইংরেজীতে, অলিতে গলিতে ইংরেজী নামের দোকানপাঠ, স্কুল-কলেজ।

উপরে ইংরেজী লিখে নীচে ছোট করে বাংলা লেখা। ফেব্রুয়ারী মাস আসলে একটু নড়ে চড়ে বসেন সবাই। ভাষার জন্য ২৮ দিনের মায়াকান্না। তারপর ১১ টি মাস আলে ভাষাকে ধর্ষন। বইমেলা হবে ৮০০/৯০০ কোটি টাকার বই বিক্রি হবে, তারপর ভাষা ১১ মাস জাদুঘরে চলে যাবে।

 

ভাষাটাকে টিকিয়ে রাখতে আমরা প্রবাসী রা যুদ্ব করছি। কিভাবে, প্রবাসে বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মদের আমরা শেখাচ্ছি বাংলা। এটাও ভাষাকে টিকানোর এক যুদ্ব। এটা অনেকে বুঝবেন না , আমরা যারা বাংলাদেশে বড় হয়েছি আমরা বাংলা বলতে লিখতে জানি। 

 বিদেশে জন্ম নেয়া নতুন প্রজন্ম বাংলা বলতে চায় না, তারা ইংরেজী  বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তখন যদি অভিভাবকরা জোর না করেন, বা নিজেরা বাংলা না বলেন তাহলে তো ভাষা এখানেই শেষ। যে সব পিতা মাতা মনে করেন বিদেশে আছে ইংরেজীই বলুক তাহলে বাংলাটাকে আপনি মেরে ফেললেন।

আবার আমি, আমার পরিবার আমরা আমাদের বাচ্চাদের বিদেশে বাংলা বলতে উদ্বুদ্ধ করছি। তারা মোটামোটি বলতে পারে তাহলে আরেকটি প্জন্মের কাছে বাংলাটা থাকল, তাদের বাচচাদের তারা কি করবে তারা চেস্টা করবে বাংলা শেখাতে। আমার চার বাচ্চাদের  কঠিন শব্দগুলো আমি বলছি, তাদের আগ্রহ আছে। সামারে মানে গ্রীস্মকালে স্কুল বন্ধ হলে শেখাবেন বাংলা। এগুলো সবই পিতামাতার উপর নির্ভরশীল।। 

 

আমি  বাচ্চাদের  উদাহরন দেই, তুমাদের সহপাটি মরক্কোনরা আরবী ভাষা, স্পেনিশ রা স্পেনিশ, চায়নিজ রা চায়নিজ ভাষায় কথা বলে- তাহলে তুমি কেন তুমার ভাষাটা শিখছ না ।  তাদের বাবা মা তাদের ভাষা নিয়ে কোন কমপ্রোমাইজ করে না, তাহলে তুমি কেন অনিহা দেখাবে।। আমি ষখন যুক্তি দিয়ে বুঝাই তখন তারা বুঝে। আসলে সব কিছুই পরিবার ও পরিবেশের উপর নির্ভর করে।

 দেশে বিদেশে কিছু উচ্ছশিক্ষিত পিতা মাতা আছেন তারা বাচ্চাদের ইংরেজী বলাটাকে অনেক বড় কিছু মনে করেন, তাদের সাথে ভাল ইংরেজী বলেন। আসলে তারা তাদের রুটটাকে ফেলে দিচ্ছেন। আবার অনেকে মনে করেন বড় ডিগ্রী জীবনের সব কিছু, আসলে ভাল মানুষ হওয়া জরুরী। নিজের দেশকে,  নিজের ভাষাকে ও নিজের কৃষ্টি কালচার সংস্কৃতি কে ভালবাসাতে হবে। সম্মান করতে হবে ভাষাকে, তুমি যাদের সাথে বিদেশে মিশবে দেখবে তাদের কাছে তারা তাদের ভাষাটা অনেক বড়। 

তাই আমাদের সবার উচিত বাংলা ভাষাটাকে শেখা ও সম্মান করা ।

বিশ্বের ৭০/৮০ টি দেশে বাংলাদেশীরা বসবাস করেন। তারমধ্যে ২০ টি দেশে বাংলাদেশী প্রবাসীরা পরিবার পরিজন নিয়ে থাকেন, সেখানেই জন্ম নিয়েছে ৫ থেকে ৭ লাখ নতুন প্রজন্ম। তাদের নিয়েই আমাদের ভাষার যুদ্বটা। তাদের দ্বতীয় ভাষা টা বাংলা, সেটা তারা বলছে না, বা শিখছে না বা তাদের শেখার তাগিদ দেয়া হচ্ছে না। এই ৫/৭ লাখ যখন বিবাহিত হবে বা হয়েছে তাদের সন্তানরা তো বাংলা কি জানবেই না। ভাষাটা হারিয়ে যাবে। এই জিনিসটা আমাদের প্রবাসীদের বুঝতে হবে। গত জানুয়ারী মাসে আমি বাংলা ভাষার উপর একটা রচনা   প্রতিযোগীতা করেছিলাম। সারা আমেরিকার নানা গ্রুপে দিয়েছিলাম, পুরুস্কৃত করব। ইংরেজীতে বাংলা ভাষাটা কেন শেখা জরুরী, কেন আমরা মাতৃভাষাটা শিখব এই নিয়ে লিখতে হবে, যা মন চায়। আমি কোন সাড়া পেলাম না। আমার বাচ্চাদের আমি তাগিদ দিয়ে লেখালাম, কিন্তুু কোথাও থেকে কোন সাড়া মিলল না। এখন আমি প্রবাসী নতুন প্রজন্মদের নিকট বাংলা ভাষা, বাংলাদেশ, ও আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্য তুলে ধরার জন্য একটি সাইট তৈরী করছি। এই প্লাটফর্ম থেকেই আমি শুরু করব যুদ্বটা। gobangla.com এই মাসে আসবে। নিজেকেই এগিয়ে আসতে হবে প্রবাসী নতুন প্রজন্মদের ধরে রাখতে হলে।

 আমাদের আঞ্চলিক ভাষা গুলোকে আজ নানা নাটকের মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে। এটা সুখের সংবাদ। আমাদের বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষা অনেক সৌন্দর্যময়। সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার বর্নমালা রয়েছে, যাকে নাগরী লিপি বলে। এগুলো আমাদের ভাষার ইতিহাস। সারা পৃথিবীতে ৭১১১ টি কথিত ভাষা রয়েছে। সিলেটি ভাষা কথা বলার লোকসংখ্যা ১১.৮  মিলিয়ন, বাংলাদেশ ও ভারতের আসাম, ত্রিপুরা সিলেটি ভাষা ব্যবহৃত হয়। চট্টগ্রাম এর ভাষায় ১৩ মিলিয়ন মানুষ কথা বলে। ওয়ার্ল্ড র্্যাংকিং এ চট্টগ্রাম ৮৮ ও সিলেট ৯৭ অবস্থানে। বাংলা ভাষা বিশ্বের ৭ ম অবস্থানে, ২৬৫ মিলিয়ন মানুষ বাংলায় কথা বলে। 

লন্ডনের নতুন প্রজন্ম ভাল সিলেটি বলতে পারে, কারন তাদের বাসায় এই ভাষাটার চর্চা রয়েছে। ইংল্যান্ডে আমাদের প্রবাসীদের এক বৃহদ অংশ বসবাস করেন ১৯০০ সাল থেকে, সেখানে তৃতীয় প্রজন্ম শিক্ষা দীক্ষায় ভাল করছে। তারা বাংলা ভাষাটা চর্চা করেন, যা অন্য কোন দেশে নাই। ইংলান্ডে এক সময় অনেকগুলো বাংলা স্কুল ও ছিল। তাই তারা বাংলা ভাষাটা শিখতে পেরেছিল। এখন ও অনেক জায়গার  কমিউনিটি ভাষাটা শেখার ব্যবস্থা করে রেখেছেন। আমাদের নিজেদের স্বার্থেই বাংলা ভাষাটা শেখাতে হবে।  এটাই আমাদের ভাষার যুদ্ধ।

মন্তব্য করুন