অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১ মে, ২০২৪, ০২:২৩ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

ভোট দেওয়ার ভিডিওধারণে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, আহত ১০

ছবি সংগৃহীত

শরীয়তপুর জাজিরা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার ভিডিওধারণ করায় মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থকদের হামলায় অন্তত ১০ সাংবাদিক আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২১ মে) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার সেনেরচর ইউনিয়নের ফরাজী দারুস সুন্নাহ হাফিজিয়া মাদরাসা কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।

আহতদের মধ্যে ৭ জনের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন, বার্তা বাজারের স্থানীয় প্রতিনিধি আশিকুর রহমান হৃদয়, যায়যায়দিনের জাজিরা প্রতিনিধি ইমরান হোসাইন, দৈনিক সংবাদের জাজিরা প্রতিনিধি পলাশ খান, দৈনিক জবাবদিহির জাজিরা প্রতিনিধি সুজন মাহমুদ, ঢাকা ক্যানভাসের প্রতিনিধি বরকত মোল্লা, বাংলাদেশ সমাচারের রুহুল আমিন, দৈনিক কালবেলার জাজিরা প্রতিনিধি আব্দুর রহিম।

এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় জাজিরা উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক সংবাদের জাজিরা প্রতিনিধি পলাশ খান, জাজিরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সুজন মাহমুদ, বার্তা বাজারের প্রতিনিধি আশিকুর রহমান হৃদয় ও ঢাকা ক্যানভাসের প্রতিনিধি বরকত মোল্লাকে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের দ্বিতীয় ধাপে শরীয়তপুর জাজিরা উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এই উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোট ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইদ্রিস ফরাজী। বেলা ১১টার দিকে সেনেরচর ইউনিয়নের ফরাজী দারুস সুন্নাহ হাফিজিয়া মাদরাসা কেন্দ্রে মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থকরা ভোটারদের চাপ প্রয়োগ করে নিজেদের পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, এমন অভিযোগ পেয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করেন এবং ভিডিওধারণা করেন বার্তা বাজারের প্রতিনিধি আশিকুর রহমান হৃদয়সহ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক। এ সময় মোটরসাইকেল প্রতীকের ব্যাচ পরিহিত এক ব্যক্তি প্রথমে তাদের বাধা দেন। পরে সাংবাদিকদের আটকে রেখে মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে যান ওই ব্যক্তি। একপর্যায়ে বাইরে থাকা অন্য সাংবাদিকরা তাদের ছাড়াতে গেলে মোটরসাইকেল প্রতীকের কমপক্ষে ৫০ জন সমর্থক তাদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করেন। এতে কমপক্ষে ১০ জন সাংবাদিক আহত হন। পরে আহতদের মধ্যে ৩ জনকে গুরুতর অবস্থায় জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

হামলায় আহত সাংবাদিক আশিকুর রহমান হৃদয় বলেন, ‘আমরা ভোট কেন্দ্রের বাইরে অবস্থান করছিলাম। হঠাৎ জানতে পারি ভোট কেন্দ্রের ভেতর ভোটারদের প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করছেন মোটরসাইকেল প্রতীকের সমর্থকরা। পরে আমরা কয়েকজন সাংবাদিক ভিডিও ধারণ করতে গেলে সবুজ শার্ট ও মোটরসাইকেলের ব্যাচ পরা এক যুবক আমাদের বাধা দেন এবং মোবাইল কেড়ে নেন।’

সাংবাদিক আশিকুর রহমান আরও বলেন, ‘পরে আমার সঙ্গে থাকা অন্য সহকর্মীরা আমাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসলে মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী ইদ্রিস ফরাজীর ভাই ইমন ফরাজীর নেতৃত্বে অনেক লোক এসে আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমরা পুলিশের থেকে সাহায্য চাইলে তারাও আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।’

আহত আরেক সাংবাদিক বরকত মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের ওপর যখন হামলা চালানো হয় তখন আমরা প্রশাসনের কাছে সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করেছিলাম, তারা তখন সরে যায়। কেউ আমাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। সাংবাদিক পরিচয়পত্র দেখলেই হামলাকারীরা মারধর শুরু করে।’

যায়যায়দিনের প্রতিনিধি ইমরান হোসেন বলেন, ‘আমাদের ওপর যখন হামলা চালানো হয় প্রশাসন শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছে। হামলাকারীরা যখন আমাদের অবরুদ্ধ করে সন্ত্রাসী কায়দায় মারছিলো প্রশাসন তখন মজা নিচ্ছিলো। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক বিচার চাই।’

জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘এখানে বেশ কয়েকজনকে আহত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিলো। এদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা গুরুতর। এ ছাড়া একজনের নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে, তার অবস্থার উন্নতি না হলে ঢাকায় পাঠানো হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি খোঁজ খবর নিচ্ছি। এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ ব্যাপারে নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম লুনা বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে জেলা প্রশাসকসহ কেন্দ্রটি পরিদর্শন করেছি। যারা আহত হয়েছেন তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মন্তব্য করুন