বিনোদন প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৭ জুন, ২০২৪, ০৩:২২ এ এম

অনলাইন সংস্করণ

গুনি নির্মাতা মনির হোসেন জীবন আর নেই

নির্মাতা ও প্রযোজক মনির হোসেন জীবন। ছবি সংগৃহীত

ছোট পর্দার জনপ্রিয় নির্মাতা ও প্রযোজক মনির হোসেন জীবন আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাহী রাজিউন)। মৃত্যকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৫ বছর। স্ত্রী ও ৪ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি। তার মৃত্যু খবর নিশ্চিত করেন তার চাচাতো ভাই।

তার থেকে জানা যায়, মনির হোসেন জীবন রাত ১১ টা ৩০ মিনিটে ব্রেইন স্ট্রোক করেন। পরে তাকে আগারগাঁয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসাইন্স হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

ডিরেক্টরস সূত্রে জানা যায়, আজ সকাল ১০ টা থেকে ১১ টা পর্যন্ত ঢাকা শিল্পকলা একাডেমিতে সর্ব সাধারণের শ্রদ্ধা এবং প্রথম জানাজা সম্পূর্ণ করে তার নিজ গ্রাম নরসিংদী জেলা মনোহরদীতে বাদ আসর দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে।

সদা হাস্যউজ্জ্বল এই গুনি পরিচালকের মৃত্যুতে সংস্কৃতি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

উল্লেখ্য, ডিরেক্টরস গিল্ড বাংলাদেশ এর সম্মানিত সহ-সভাপতি মনির হোসেন জীবন মডার্ণ গানের জন্য বিখ্যাত ‘বগুড়া ইয়ুথ কয়ারে’র টিপুর কণ্ঠে বেশ কিছু গানসহ অসংখ্য গান রেকর্ডিং করে এবং মিউজিক ভিডিও করে এই ‘জলসা ঘর’ অনুষ্ঠানে প্রচার করা হত আসাদুজ্জামান নূর এবং সারা যাকেরের উপস্থাপনায়।

মরমী গীতিকার হাসন রাজা, রাধা রমন, দীন ভবানন্দ, উকিল মুন্সি, সৈয়দ শাহনুর, গিয়াস উদ্দীন এবং শাহ আব্দুল করিমের মত বিখ্যাত মরমী গীতিকারদের গান প্রচার করা হত সেই ‘জলসা ঘর’ অনুষ্ঠানে। এখানে উল্লেখ্য শাহ আব্দুল করিমকে সিলেটের সুনামগঞ্জ থেকে সংগীত শিল্পী সেলিম চৌধুরী এবং তুহিন মাধ্যমে খুঁজে বের করেন, ঢাকায় এনে ‘জলসা ঘর’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রথম সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয়। পরবর্তীতে শাহ আব্দুল করিম ইতিহাসের অংশ হয়ে যান। এছাড়াও হুমায়ুন আহমেদের প্রচুর জনপ্রিয় নাটক পরিচালনার সাথে জড়িত মনির হোসেন জীবন।

২০০০ সাল থেকে মনির হোসেন জীবন তাঁর নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা ‘স্বাধীন চলচ্চিত্র’ গঠন করেন। তাঁর প্রযোজনা সংস্থা থেকে তিনি অসংখ্য একক নাটক নির্মাণ করেন।

এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য- ‘শাদা কাগজ’, ‘বন্যার চোখে জল’, ‘অপ্রত্যাশিত প্রত্যাশা’, ‘অতঃপর নিঃস্বঙ্গতা’, ‘একজন ময়না’, ‘গানম্যান’, ‘বিবাহ সংকট’, ‘কোরবান আলীর কোরবানী’ সহ প্রায় শতাধিক নাটক নির্মাণ করেছেন।

আলোচিত টেলিফিল্মের মধ্যে ‘কালা গলার মালা’, ‘ঢুলি বাড়ী’, ‘হতাই’, ‘ফজর আলী’, ‘অজ্ঞান পার্টি’, ‘তুচ্ছ’, ‘কথা আছে’, ‘বংশ প্রদীপ’, ‘অহম’, ‘বাঙ্গালির বিয়ে’, ‘নিজের সংগে দেখা’, ‘তুমি এলে তাই’, ‘ফোর ষ্টুপিড’ সহ প্রচুর টেলিফিল্ম নির্মাণ করেছেন মনির হোসেন জীবন।

আলোচিত ধারাবাহিক নাটকের মধ্যে ‘চোর কাঁটা’, ‘আলী বাবা চল্লিশ স্মাগলার’, ‘অভিমানী’, ‘ফৈজু কবিরাজ’, ‘সেই করেছো ভাল’, ‘নীল ছায়া’, ‘খন্ডচিত্র’, ‘গুজব’, ‘ভবের মানুষ’, ‘ফটিক চোর না সবাই’। এছাড়া ‘গুনীন’, ‘আগন্তুক’, ‘থানার নাম শনির আখড়া’ সহ অসংখ্য ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করেছেন তিনি।

শর্টফিল্ম ‘বাঁচার জন্য’, ‘গম্ভীরা’, ‘আর্সেনিক’, ‘দ্যা রিপোর্টার’, ‘লেডি মাস্তান’, ‘সেনিটারি লেট্রিন ছাড়া কোন গতি নাই’, ‘শিক্ষার আলো’ সহ বেশকিছু শর্ট ফিল্ম নির্মাণ করেন।

এছাড়াও অসংখ্য প্রামান্যচিত্রের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘প্রাথমিক ও গনশিক্ষা’, ‘ক্ষুদ্ররিন’, ‘ওয়াটার চুল্লি’, ‘এক চাবিতে তিন দরজা’, ‘বিষের নাম আর্সেনিক’, ‘সেনিটারী লেট্রিন’, ‘ঢাকা ওয়াশা’, ‘মধুমতি মডেল টাউন’, ‘মশা’, ‘পুলিশ ডকুমেন্টরী’, ‘বিবিএস কেবলস’, ‘নাহি এসএস পাইপ’, ‘নাহি জিও টেক্সটাইল’, ‘ডায়নামিক কার’ সহ অসংখ্য এভি নির্মাণ করেছেন।

আর দর্শক নন্দিত বিভিন্ন কোম্পানীর প্রচুর বিজ্ঞাপন চিত্র নির্মাণ করেছেন যা অনেক আলোচিত হয়েছে। মিডিয়াতে ৩০ বছর ধরে অত্যন্ত সুনাম এবং দক্ষতার সহিত কাজ করে গেছেন।

মনির হোসেন জীবন তাঁর কাজের স্বীকৃতি হিসেবে মেরিল প্রথম আলোসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

মন্তব্য করুন