নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারী, ২০২৪, ০৩:৫০ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

সহসাই কমছে না শীতের প্রকোপ

কয়েকদিনের তীব্র শীত আর বৃষ্টির পর আজ সকাল থেকে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে দেখা মিলেছে সূর্যের। কমে এসেছে শীতের তীব্রতাও। এতে অনেকটাই স্বস্তি ফিরেছে জনজীবনে। তবে সহসাই দেশে চলমান শীতের প্রকোপ কমছে না বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। অধিদপ্তর বলছে, দেশে কয়েক জায়গায় চলমান শৈত্যপ্রবাহ আরও কয়েকদিন অব্যহত থাকবে। যদিও উত্তরের জনপদে এখনও শীত বিরাজ করছে। আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়, ৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল বৃহস্পতিবার তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি।

দশের নিচেই তাপমাত্রা থাকার কারণে ঘনকুয়াশা আর হিমশীতল বাতাস বয়েই চলেছে। এতে কনকনে শীতে দূর্ভোগ আরও বেড়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে ঠিকমত সূর্যের দেখা মিলছে না। হঠাৎ রোদের দেখা মিললেও তাপ ছড়ানোর আগেই সূর্য ঘনকুয়াশা আর মেঘের আড়ালে ঢেকে যায়।

তীব্র ঠাণ্ডা আর ঘণ কুয়াশার আচ্ছাদন কাটিয়ে প্রকৃতিতে ফিরে আসছে স্বস্তি। রাজধানী ঢাকার আকাশে দেখা মিলেছে রোদের। দেশের বেশিরভাগ জায়গাতেই বেড়েছে দিনের তাপমাত্রা। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে জনজীবনে।

তবে, এখনও শীতের তীব্রতা রয়েছে উত্তরের জনপদে। সেই সাথে আছে ঘন কুয়াশা। শীতে তাই এখনও বিপর্যস্ত পঞ্চগড়ের খেটে খাওয়া মানুষেরা। নীলফামারীতে ঘনকুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে ফসলের ক্ষেত।

রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে বিরাজমান। হাড়কাঁপানো শীত জেঁকে বসেছে এই অঞ্চলে। শীতের কারণে জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কমেছে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমের চিত্র নগর ও গ্রামের সর্বত্রই।

পঞ্চগড়ে টানা একসপ্তাহ থেকে তীব্র শীত। হিমালয়ের হিমেল হাওয়ায় হাড়কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানুষ ও জীবজন্তু। জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষেরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।

শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঘন কুয়াশায় ঢাকা পুরো জেলা। কুয়াশার সঙ্গে ঝরছে হিমশীতল শিশির। শহর ও গ্রামের সড়কগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। টানা শীতের কারণে চরম বিপাকে সময় পার করছে শিশু ও বৃদ্ধরা। শীতের কারণে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগ।

গত ৮-৯ দিন ধরে কুড়িগ্রামে তাপমাত্রা নিম্নগামী থাকায় সবচেয়ে বেশি কষ্টে পড়েছেন জেলার খেটে খাওয়া ও দিনমজুর শ্রেণির মানুষজন। আজ শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, আরও ২-৩ দিন তাপমাত্রা নিম্নগামী থাকতে পারে। পরে তাপমাত্রা কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে।

নোয়াখালীতেও জেঁকে বসেছে শীত। হাড়কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। সেই সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে শীতের ভোগান্তি পৌঁছেছে চরমে। বৃষ্টির ফলে দিনের তাপমাত্রা আরও কিছুটা কমবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

নোয়াখালী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, নোয়াখালীতে আজ সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপের প্রভাবে বিভিন্ন স্থানে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। তবে এ বৃষ্টিপাত স্থায়ী থাকবে না।

বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) মধ্যরাত থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর কনকনে ঠান্ডা বাতাসে জবুথবু অবস্থা সবার। রাত গড়িয়ে সকাল হলেও ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকে পথঘাট। দিনের বেলাতেও যানবাহনগুলোকে পথ চলতে হয় হেডলাইট জ্বালিয়ে।

কনকনে শীতের মাঝে ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্ন এলাকায় শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে জেলা পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি। শীতে এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। জয়পুরহাটে শীতের প্রকোপে ডায়রিয়া, সর্দি-জ্বর, নিউমোনিয়াসহ নানা ধরনের রোগ নিয়ে হাসপাতালে বাড়ছে রোগির ভিড়।

তবে, শীত নিয়ে অনেকটা সুখবরই দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আগামী ৪৮ ঘন্টায় দেশের কোথাও বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। সেইসঙ্গে কমে আসবে শীতের তীব্রতাও। এছাড়া চলতি মাসে আর কোন শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা নেই বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

আজ শুক্রবারের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই সময় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে।

মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িক বিঘ্ন ঘটতে পারে।

আবহাওয়ার সিনপটিক অবস্থায় বলা হয়েছে— উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আগামী পাঁচদিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা রয়েছে।

আগামীকাল শনিবারের জন্য দেওয়া পূর্বাভাসেও একই তথ্য জানিয়েছে অধিদপ্তর। তবে বর্ধিত পাঁচ দিনের পূর্বাভাসে অধিদপ্তর জানিয়েছে, এই সময়ে তাপমাত্রা পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে।

মন্তব্য করুন