চাঁদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ৩০ জুন, ২০২৪, ১১:৪৬ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

সমাজচ্যুত পরিবার, কথা বললেই জরিমানা

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

সমাজের কলোহ নিরসনে স্থানীয়ভাবে জনপ্রতিনিধিদের সমাধানের বিধান থাকলেও ব্যাতিক্রম ঘটনাও ঘটছে। তেমনি অসহায় ও দিনমুজুর একটি পরিবারের পারিবারিক সমস্যাকে কেন্দ্র করে নিজেদের বানানো নীতিতে তাদের সমাজচ্যুত করার অভিযোগ উঠেছে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়।

মসজিদে নামাজ পড়া,  বাচ্চাদের সকালে মক্তবে আরবী পড়তে যাওয়া নিষেধসহ কেউ তাদের সাথে কথা বললে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করার বিধান করা হয়েছে। গত ২২ দিন ধরে অসহায় এ পরিবারটি অমানবিক জীবন যাপন করছে।

পরিবারটির একমাত্র কর্তা অটোরিকশা চালক মইজ উদ্দিন বলেন, আমাদের স্বামী স্ত্রীর ঝগড়াকে ইস্যু করে কয়েকজন মানুষ তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এই অমানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে। আমাদের সাথে কেউ কোন কথা বলে না, আমার বাচ্চাদের মসজিদে যাওয়া নিষেধ করেছে, আমার গাড়িতে কেউ উঠেনা, এই সমাজের কেউ আমাদের সাথে কথা বললে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করার নিয়ম করেছে। জরিমানার ভয়ে কেউ আমাদের সাথে কথা বলে না। আমার সন্তানদের মক্তবে পড়াশোনা বন্ধ রয়েছে। আমি কিংবা আমার পরিবারের কেউ এই সমাজের কারো সাথে কথা বললে আমাদেরকেও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

মইজ উদ্দিন বলেন, আমার অভাব অটনের সংসার। প্রায় সময়ই আমাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া হয়ে থাকে। পারিবারিক সমস্যা প্রায় প্রতিটি ঘরে। এরচেয়ে জগন্য নানান ঘটনা সমাজে ঘটে। তাই বলে কাউকে এক ঘরে করে রাখার আইন আছে শুনিনি। আমরা গরিব ও অসহায় বলে এই জুলুম চালানো হচ্ছে।

সমাজের কারা আপনার উপর এই জুলুমের নিয়ম করছে জানতে চাইলে মইজ উদ্দিন বলেন, আমি খেঁটে খাওয়া মানুষ। একটি অটো রিকশা চালিয়ে সংসার চালাই।

তবে এই সমাজ যারা চালায়, যারা বিত্তশালী ক্ষমতাবান তারা সবাই। না হয় আমাদের অপরাধ থাকলে তারা বিচার করবে কিন্তু এক ঘরে করার এই জুলুম তারা করতে পারতো না। কোরবানীর ঈদে আগে তারা আমাদের এক ঘরে করে দেয়। ঈদের সময় সমাজের কেউ আমাদের কোন  মাংশ তারা দেয়নি। এমনকি গরিব বলে সমাজ থেকে যে একটা ভাগ পাই তা থেকেও তারা আমাদের বঞ্চিত করেছে। কলিজা ফেঁটে যায় এই ঈদে আমি আমার সন্তানদের ১ টুকরা মাংশ কিনে খাওয়াতে পারিনি। আমার বাবা-মা ঢাকায় থাকে। শুনেছি তাদের ডেকে এনে স্বাক্ষর রেখেছে। সমাজের সবাই নাকি আমাদের এক ঘরে করার বিষয়ে স্বাক্ষর দিয়েছে। মিজানুর রহমান মিজান নামের একজন লোকের প্ররোচনায় আমার পরিবারকে তারা এক ঘরে রেখেছে। আমাকে তারা বলেছে সমাজের সবার স্বাক্ষর নিয়েছে। আমি এই বিষয়ে কোন কথা বললে তারা নাকি আমার বিরুদ্ধে মামলা করবে। এই ভয়ে এতদিন আমি কাউকে কিছু বলিনি। আমি এই জুলুমের বিচার চাই। আমি এই অত্যাচারের শাস্তি চাই। কিন্তু কে করবে তাদের বিচার?  কে দিবে তাদের শাস্তি?  তারাইতো এই সমাজের জমিদার।  

ছেংগারচর পৌরসভার কাউন্সিলর বোরহান উদ্দিন জানান, তাদের এক ঘরে করে রাখা হয়েছে। আমি বলেছি তাদের অন্যায় থাকলে বিচার করা হবে। কিন্তু কোন সমাজ থেকে বিতাড়িত করার কোন আইন নেই। আমি তাদের ১ মাসের সময় দিয়ে এসেছি। কিন্তু ওই সমাজের লোকজন আমার কথা অমান্য করে এ কাজ করেছে।  

মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন রনি বলেন, এটা অমানবিক ঘটনা। তারা অভিযোগ দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) একি মিত্র চাকমা জানান, পরিবারটি এখন কি করবে জানতে চাইলে তিনি বলেন,  কোন ব্যক্তি বা পরিবারকে একঘরে করে রাখা আইন বহির্ভূত কাজ। ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ দিলে ব্যবস্থা নিবেন।

মন্তব্য করুন