রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৭ জুন, ২০২৪, ০৯:৫১ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

এবার স্ত্রীসহ আরেক এনবিআর কর্মকর্তার সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ

কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল। ছবি: সংগৃহীত

ছাগলকাণ্ড শেষ না হওয়ার আগেই এবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রথম সচিব (ট্যাক্সেস লিগ্যাল অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল, তার স্ত্রী ও স্বজনসহ ১৪ জনের ৮৭টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা অবরুদ্ধের (ফ্রিজ করে রাখার) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের নামে-বেনামে থাকা সব সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত এ আদেশ দেন। কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তদন্ত করছে দুদক। আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানী করেন সংস্থাটির আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।

এছাড়াও দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ফয়সালসহ ১৪ জনের ৮৭টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ছয় কোটি ৯৬ লাখ টাকা অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ফয়সালসহ সাতজনের নামে থাকা ১৫টি সঞ্চয়পত্রে থাকা দুই কোটি ৫৫ লাখ টাকাও অবরুদ্ধ করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ফয়সালের স্ত্রী আফসানা জেসমিনসহ চারজনের নামে থাকা স্থাবর সম্পদ জব্দ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিন দুদকের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী টিমের সদস্য মোস্তাফিজ রাজস্বের কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল, তার স্ত্রী আফসানা জেসমিন এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিগণের নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর, বিক্রয় বা মালিকানাসত্ব বদল রোধের জন্য ব্যাংক হিসাব, ব্যাংকে রক্ষিত সঞ্চয়পত্র ও নন ব্যাংকিং ফাইনান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানের আমানতসমূহ থেকে অর্থ উত্তোলন অবরুদ্ধ এবং স্থাবর সম্পদ জব্দের আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়েছে, কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল তার নিজ নামে ও তার স্ত্রী আফসানা জেসমিন এর নামে জলসিড়ি আবাসন প্রকল্পে মোট দুই কোটি ৩৫ লাখ ৬৫ হাজার টাকা পরিশোধ করে ৫ কাঠার প্লট কিনেছেন। অনুসন্ধান চলার সময় তিনি প্লটটি বিক্রি করে দেন। দুদক অনুসন্ধান শুরুর পর থেকে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্টরা অপরাধলব্ধ সম্পদ বিক্রি করার চেষ্টা করছেন মর্মে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়। অপরাধলব্ধ আয়ের মাধ্যমে অর্জিত বর্ণিত সম্পদ বা সম্পত্তির বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তা বেহাত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিধায় রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

আবেদনে আরও বলা হয়, অপরাধলব্ধ আয়ের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদ মানিলন্ডারিং আইনের ১৪ ধারা মতে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল তার স্ত্রী আফসানা জেসমিন এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিদের নামে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর, বিক্রয় বা মালিকানাসত্ব বদল রোধের নিমিত্ত ব্যাংক হিসাব, ব্যাংকে রক্ষিত সঞ্চয়পত্র ও নন ব্যাংকিং ফাইনান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানের আমানতসমূহ থেকে অর্থ উত্তোলন অবরুদ্ধ এবং স্থাবর সম্পদ জব্দ করা একান্ত প্রয়োজন।

আদালতে দুদকের আইনজীবী জানান, কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল ইনকাম ট্যাক্স কর্মকর্তাদের অর্থের বিনিময়ে বদলী বাণিজ্য, আয়কর দাতাদের ভয় ভীতি প্রদর্শন করে অর্থ গ্রহণ, বিভিন্ন অনিয়ম এবং দুর্নীতির মাধ্যমে ১ হাজার কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন। তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ প্রকৃতি, উৎস, অবস্থান, মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ, গোপনের উদ্দেশ্যে স্থানান্তর বা রূপান্তর বা হস্তান্তর করে মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন আছে।

সম্প্রতি কোরবানির জন্য রাজধানী সাদিক এগ্রো থেকে ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনতে গিয়ে আলোচনার জন্ম দেন আরেক এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছেলে ইফাত। মতিউরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর তাকে বর্তমান দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয় এনবিআর। তাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁকে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী ব্যাংক পিএলসির পরিচালক পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এরই মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের প্রেক্ষিতে মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে আদালত। তার বিরুদ্ধেও ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। মতিউরের স্ত্রী–সন্তান ও পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে দেশে শত শত কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদের খোঁজ মিলেছে।

 

মন্তব্য করুন