ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২১ এপ্রিল, ২০২৪, ০৭:৫১ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

রেশম কারখানা উদ্বোধনের ৬ মাস না পেরোতেই ফের বন্ধ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

লোকসানের কারণে দুই দশক বন্ধ থাকার পর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানাটি সচল হয় ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে। রেশম বোর্ডের সঙ্গে অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদে ৮ লাখ ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে কারখানা পরিচালনার দায়িত্ব নেয় ঠাকুরগাঁওয়ের সুপ্রিয় গ্রুপ। চুক্তির পর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় সুপ্রিয় রেশম কারখানা।

উদ্বোধনের পর নতুন করে কারখানাটি চালু হওয়ায় স্বপ্ন বোনেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। তৈরি হয় পরিবার-পরিজন নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে বাঁচার আশা। কিন্তু ৬ মাস না যেতেই চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কারখানাটি আবারও বন্ধ হয়ে যায়। গত বছরের ৩ আগস্ট ঢাকঢোল পিটিয়ে রেশম কারখানাটি উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলী সদস্য ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন।

রেশম কারখানাটি বন্ধের প্রসঙ্গে দায়িত্বরত ম্যানেজার মো. তুষার জানান,৬ মাসে এ কারখানায় দুই হাজার গজ শাড়ি এবং ৩০০ গজ পাঞ্জাবির কাপড় উৎপাদন করা হয়েছে। তবে তাঁরা বাহিরের মার্কেট ধরতে পারেনি। দীর্ঘদিন কারখানাটি বন্ধ থাকায় এটি চালু হয়েছে অনেকেই তা জানেন না। তবে কিছু কাপড় স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হয়েছে। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে কোনো ধরনের বাজার  তৈরি করতে পারেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ। সেই জন্য কারখানাটি সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে খুব তাড়াতাড়ি উৎপাদনে ফিরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন কারখানার এই ম্যানেজার।

তবে বাজার ভালো না থাকায় কারখানাটি সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানান, মালিক মো. বাবলুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা রেশম কারখানাটি চালু করেছিলাম। সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছে। আমাদের শুধু এই কারখানা নয়, অন্যান্য যে কারখানা রয়েছে সেগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছে। যদি মার্কেট ধরতে পারি তাহলেই আমরা উৎপাদনে খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসব।

এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জোনাল রেশম সম্প্রসারণ কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক মো. মাহবুব-উল-হক বলেন, সুপ্রিয় গ্রুপের মালিক শর্ত ভঙ্গ করে কারখানার উৎপাদন হঠাৎ করে বন্ধ করে দিয়েছেন। এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

রেশম বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আরডিআরএস ১৯৭৫-৭৬ সালে ঠাকুরগাঁওয়ের গোবিন্দনগর এলাকায় ৩ দশমিক ৩৪ একর জমির ওপর এই রেশম কারখানাটি স্থাপন করে। লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ১৯৮১ সালের ৩০ জুন কারখানাটি রেশম বোর্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকার নতুন যন্ত্রপাতি কিনে কারখানাটির আধুনিকায়ন করে। লোকসান থাকলেও কোম্পানিটি তখন ভালোই চলছিল। কিন্তু মূলধন না থাকার কথা বলে ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর তৎকালিন বিএনপি  সরকার কারখানাটি বন্ধ করে দেয় ।

ওই সময় কারখানায় কর্মরত ১৩৪ স্থায়ী শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন। পাশাপাশি বিপাকে পড়েন আরও প্রায় পাঁচ হাজার পলুচাষি (তুঁতগাছ চাষ করেন যাঁরা)। সে সময় আন্দোলন করেও কারখানাটি চালু করতে পারেনি ঠাকুরগাঁওবাসী। বাজার না পেয়ে এ অঞ্চলের পলুচাষিদের অনেকেই চাষ কমিয়ে দিতে বাধ্য হন। এরপর বিভিন্নভাবে উদ্যোগ নেওয়া হলেও কারখানাটি আর চালু হয়নি।

২০১৭ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আবদুল আওয়াল কারখানাটি চালুর যৌক্তিকতা দেখিয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন। বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ১১ সদস্যের একটি দল ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল কারখানাটি পরিদর্শন করেন। পাশাপাশি সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করে কারখানাটি চালু করার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেন।

২০২১ সালের ২২ মার্চ জেলা প্রশাসকের সভা কক্ষে রেশম কারখানাটি চালু করার বিষয়ে এক মতবিনিময় সভা হয়। সেখানে রেশম বোর্ডের তৎকালীন মহাপরিচালক মু. আবদুল হাকিম বলেন, বোর্ডের জনবল সংকট রয়েছে। যত দিন জনবল নিয়োগ না হবে, তত দিন কারখানাটি চালাতে পারবেন না। এ জন্য তারা মাসিক বা বার্ষিক ফি নিয়ে ব্যক্তি খাতে দিতে চান। এই আলোচনার পর স্থানীয়ভাবে কয়েকজন কারখানাটি পরিচালনার আগ্রহ দেখান। কিন্তু পরে সেই উদ্যোগ থেমে যায়। অবশেষে কারখানাটি বেসরকারি পর্যায়ে বরাদ্দের জন্য দরপত্র আহ্বান করে রেশম বোর্ড। অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারের জন্য ৫ বছর মেয়াদে ৮ লাখ ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে কারখানা পরিচালনার সুযোগ পায় ঠাকুরগাঁওয়ের ‘সুপ্রিয় গ্রুপ’।

ঠাকুরগাঁও রেশম কারাখানায় বর্তমানে ২০টি রিলিং মেশিন, ১৬টি হ্যান্ডলুম, ২০টি পাওয়ার লুমসহ প্রায় সব যন্ত্রাংশ সচল রয়েছে।

মন্তব্য করুন