রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১ জুলাই, ২০২৪, ১১:৩৯ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

ইউরোপের কথা বলে লিবিয়ায় নির্যাতন: হোতা পাঠান গ্রেপ্তার

মানবপাচার চক্রের প্রধান মাহবুব পাঠান। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

ইউরোপে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে লিবিয়ায় নিয়ে অমানবিক নির্যাতন ও লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে একটি মানবপাচার চক্রের প্রধান মাহবুব পাঠানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তিনি পরিবারসহ লিবিয়ার বেনগাজি এলাকায় থাকেন।

আজ সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি জানায়, গত ২৮ জুন সন্ধ্যায় অভিযান চালিয়ে মাহাবুবকে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে স্বপরিবারে লিবিয়ায় অবস্থান করে বেনগাজির বাংলাদেশি কমিউনিটিকে নেতৃত্ব প্রদানের আড়ালে মানব পাচার চক্র পরিচালনা করছিলেন।

সিআইডি জামায়, অভিযুক্ত মাহাবুব ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছে। মাহাবুব বিরুদ্ধে ইউরোপ যেতে ইচ্ছুকদের লিবিয়ায় আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করে দেশে স্বজনদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করতো।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চক্রটি বাংলাদেশিদের উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে ইউরোপে পাঠানোর কথা বলে লিবিয়া নিয়ে গিয়ে আটক করত। এরপর তাদের আটক রেখে শারিরীক নির্যাতন করে নির্যাতনের ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে মুক্তিপণ আদায় করত। মুক্তিপণ আদায়ের পর বিপদজনক নৌযাত্রার মাধ্যমে ইউরোপে পাঠানোর চেষ্টা করত। 

সিআইডির দেওয়া তথ্য মতে, ২০২১ সালের ১৭ মে ভূমধ্যসাগরে তিউনিসিয়া উপকূলে মাহাবুব পাঠানের চক্রের শিকার ৬৪ বাংলাদেশিসহ সর্বমোট ১০৪ জন অভিবাসী ভাসতে থাকা অবস্থায় উদ্ধার হন। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সহায়তায় তিউনিসিয়ায় থাকা এসব বাংলাদেশিকে ফেরত আনা হয়। এদের একজন মিলন বেপারী (২৩) মানবপাচারকারী চক্রটির বিরুদ্ধে নড়িয়া থানার মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে একটি মামলা করেন। 

সিআইডি বলছে, চক্রটি মিলন বেপারী ও অন্যান্য ভিকটিমদেরকে এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে করে প্রথমে দুবাই নিয়ে যায়। এরপর তাদের দুবাই থেকে ফ্লাইটে মিশর হয়ে নেওয়া হয় লিবিয়ার বেনগাজী। সেখানে মাহাবুব পাঠান ও তার সহযোগীরা একটি ক্যাম্পে তাদেরকে আটক রাখে এবং শারীরিক নির্যাতন করে। পরে সেই নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে ভিকটিমদের পরিবারের নিকট পাঠিয়ে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২০২১ সালের ২ মে বাদীর মা বিউটি আক্তার ও চাচী মনি বেগম আসামীদের দেওয়া ব্যাংক একাউন্টে ২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা প্রদান করে এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত চক্রের সদস্য হেনা বেগমকে নগদ ৪ লাখ টাকা দেয়। এরপর মাহাবুব পাঠান ও তার সহযোগীরা সুকৌশলে বাদীসহ অন্যান্য ভিকটিমদের ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে দ্বিতীয় পর্যায়ে লিবিয়ার ত্রিপলীতে চক্রের আরেকটি ক্যাম্পে নেয়।

সেখানে তাদের আটকে রেখে দ্বিতীয় দফা নির্যাতন করে টাকা দাবি করা হয়। পরে ওই বছরেরই ১২ মে বাদীর মা বিউটি আক্তার ও চাচী মনি পুনরায় হেনা বেগমকে আরও ৪ লাখ টাকা দেয়। ১৫ দিন নির্যাতনের পর তাদেরকে ইতালির উদ্দেশ্যে ভূমধ্যসাগরে হাওয়ায় (বাতাসে) ভাসা একটি প্লাস্টিকের নৌকায় আরও অনেকের সঙ্গে তুলে দেয়।

মন্তব্য করুন