রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১ জুলাই, ২০২৪, ০৬:১৫ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপিত

গবেষণাপ্রধান বিশ্ববিদ্যালয় করার অঙ্গীকার

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল ও অতিথিদের নিয়ে আজ অধ্যাপক ড. শরীফ উদ্দিন আহমেদ সম্পাদিত ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ শীর্ষক গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন করেন। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

গবেষণাপ্রধান ‘আর আই’(RI) ক্যাটাগরির বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার দৃঢ় অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হলো ১০৪তম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) দিবস। দিবসটি উপলক্ষে আজ সোমবার ঢাবি ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে ছিল পতাকা উত্তোলন, পায়রা উড়ানো, বেলুন উড্ডয়ন, কেক কাটা, থিম সং পরিবেশন, শোভাযাত্রা এবং আলোচনা সভা। ১৯২১ সালের এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা বৃদ্ধিতে উচ্চশিক্ষা’।

সকাল ১০টায় টিএসসি’র পায়রা চত্বরে জাতীয় সংগীত পরিবেশন, জাতীয় পতাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও হলসমূহের পতাকা উত্তোলন, পায়রা উড়ানো, বেলুন উড্ডয়ন, থিম সং পরিবেশন এবং কেক কাটার মধ্য দিয়ে দিবসটির কর্মসূচি শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এর আগে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও অ্যালামনাইবৃন্দের অংশগ্রহণে স্মৃতি চিরন্তন চত্বর থেকে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল শোভাযাত্রায় নেতৃত্ব দেন।

সকাল সাড়ে ১০টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে ‘তরুণ প্রজন্মের দক্ষতা বৃদ্ধিতে উচ্চশিক্ষা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী প্রধান অতিথি হিসেবে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ এফ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সাদ্দাম হোসেন। রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন।

জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী উচ্চশিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে দারিদ্র্র্য, শোষণ ও বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য তরুণ প্রজন্মের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, তরুণদের সামাজিক দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা অর্জন এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করতে হবে। তারুণ্য জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সময়। এই সময়কে যথাযথভাবে সদ্ব্যবহার করে মেধা ও মননকে শানিত করতে হবে এবং প্রখর বুদ্ধিদীপ্ত হতে হবে। নিষ্ঠা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন এবং উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য তিনি তরুণদের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষা মানুষকে জ্ঞানী, দক্ষ এবং মূল্যবোধ সম্পন্ন করে তোলে। তাই শিক্ষার মাধ্যমেই পরিবর্তন সম্ভব। জ্ঞান অর্জনের অন্যতম মাধ্যম উচ্চশিক্ষা। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের একটি লক্ষ্য ‘ট্রানজেকশনাল’ (Transactional), অপরটি ‘ট্রান্সফরমেশনাল’ (Transformational)। প্রথম লক্ষ্যটির ক্ষেত্রে দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষা দানের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীকে কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রস্তুত করা হয়। উচ্চশিক্ষার দ্বিতীয় লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য শুধু ভালো চাকুরি পাওয়া নয়, বরং এক্ষেত্রে জ্ঞান আহরণের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীর পরিপূর্ণ মানবিক বিকাশ ঘটে এবং সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সে সক্ষম হয়। একই সঙ্গে তার মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত হয় এবং সে বিশ্লেষণ করার দক্ষতা অর্জন করে।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। পৃথিবীর আর কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কৃতিত্বপূর্ণ নজির নেই। ২০৩৫ সালের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে উচ্চতর গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ২০৪৫ সালের মধ্যে গবেষণা-প্রধান ‘আর আই’(জও) ক্যাটাগরির বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন ।

তিনি বলেন, এলক্ষ্যে ইতোমধ্যেই ‘অ্যাকাডেমিক মাস্টার প্ল্যান’ এবং ‘অ্যাকাডেমিক ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান’ প্রণয়ন করা হয়েছে। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। জাতীয় নেতৃবৃন্দ, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, গবেষক, অ্যালামনাই, ব্যবসায়ীসহ সকলের সহযোগিতায় গবেষণা, উদ্ভাবন ও দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের শিক্ষা মানচিত্রে অনন্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. শরীফ উদ্দিন আহমেদ সম্পাদিত ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইতিহাস ও ঐতিহ্য’ শীর্ষক গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী উপাচার্য ও অতিথিদের নিয়ে এই মোড়ক উন্মোচন করেন।

 

 

মন্তব্য করুন