শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার

প্রকাশিত: ১০ জুন, ২০২৪, ০৭:২৫ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

চার বছর তদবির করেও একটি ঘর পায়নি বঙ্গবন্ধু ভক্ত শের আলী

বঙ্গবন্ধু ভক্ত শের আলী। ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই নামটির সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির অনন্য আবেগ। সে কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে বঙ্গবন্ধু পাগল অনেক মানুষ। বঙ্গবন্ধুর জন্য অন্তহীন শ্রদ্ধা মিশে আছে যাদের মনে। কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের জুমনগরের তেমনি একজন বঙ্গবন্ধু ভক্ত শের আলী।

শের আলী ৪৭ বছর ধরে প্রতি ওয়াক্তে বঙ্গবন্ধুর আত্মার শান্তি কামনা করে নফল নামাজ পড়েন। কিছু চাওয়ার নেই তার। হতদরিদ্র, গৃহহীন ও ভুমিহীন শের আলীর শুধু  চাওয়া ছিল মুজিব বর্ষের একটি ঘর। গত ৪ বছর ধরে বিভিন্ন ভাবে দপ্তরে দপ্তরে তদবিরও করেছেন। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি তার।

কক্সবাজার সদর উপজেলা ও ঈদগাঁও উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া ২০২২ সালে তাকে ইসলামপুরে মুজিববর্ষের একটু ঘর দেওয়ার জন্য তালুকাভুক্ত করেন। জায়গাও তাকে সনাক্ত করে দেওয়া হয়। সে সময় খুশিতে আত্মহারা ছিলেন বঙ্গবন্ধু পাগল শের আলাী। কিন্তু ভাগ্য আর সহায় হয়নি।

২০২৩ সালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া বদলী হয়ে গেলে এই ভুমিহীন, গৃহহীন শের আলীর ভাগ্যও বদল হয়। দুর্ভাগ্য ভার করেন তার জীবনে। নতুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঈদগাঁও উপজেলায় যোগদানের পর সেই পুরনো তালিকা বাদ দিয়ে নতুন তালিকা করেন এই তালিকা নিয়েও শুরুতে বির্তক ও সমালোচনা শুরু হয়।

বয়স ঠিক গুনে গুনে বলা না গেলেও অনুমান করা হয় ৮২ পার হয়েছে। চেহারায় সারল্য ও এক কঠিন ব্যক্তিত্বের মিশ্রণ তার সর্বাঙ্গে। তিনি একজন বঙ্গবন্ধু ভক্ত। আজ পৃথিবীর কাছে তার খুব বেশি কিছু চাওয়ার নেই। যে বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশ স্বাধীন হয়েছে, একটি স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে, সেই বঙ্গবন্ধুর রক্ত আছে আজকের প্রধামন্ত্রীর শরীরে। সেই রক্তের ডাক তিনি তার ভেতরে শুনতে পান। তিনি শুধু বঙ্গবন্ধ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চেয়ে ছিলেন মাথার উপর ছায়া আর একখন্ড জমি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শের আলী ইসলামপুরের একটি হতদরিদ্র পরিবারের হয়েও দলের জন্য কাজ করছেন। তিনি এখনো ১৫ আগস্ট এলে বঙ্গবন্ধুর জন্য মুরগি জবাই করে ফাতেহা দেন, বঙ্গবন্ধু ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হায়াত বৃদ্ধির জন্য নামাজ ও দোয়া করেন। শের আলী সময় পেলে এখনো আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসংগঠনের কোনো মিটিং-মিছিল বাদ দেন না। এখনো প্রতি বছর শোকর‌্যালিতে তার উপস্থিতি লক্ষণীয়।

কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড জুমনগর (অরলতলি) এলাকায় একমাত্র ছেলে নিয়ে বনবিভাগের জমির ওপর বসবাস করছেন শের আলী। ছেলের বাড়িতে আবাস তার। এই বাড়িতেই গত ৭ বছর আগে তিনি স্ত্রীকে হারান। নিঃসঙ্গতাকে সঙ্গী করে সাদাসিধে মানুষটি জীবন অতিবাহিত করছেন।

বঙ্গবন্ধু পাগল এই শের আলীর সঙ্গে দীর্ঘ আলাপে উঠে এসেছে, সাধারণ এই মানুষের অসাধারণ অনুভূতি আর আবেগ বলে দেয় মৃত্যু জাতির জনককে করেছে অমর। সাদা মনের সরল মানুষটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বুকে আগলে রেখেছেন। বঙ্গবন্ধুর হয়ে সারাটি জীবন নফল নামাজ আদায় করছেন।

তাকে নিয়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘কক্সবাজারে কয়েকজন বঙ্গবন্ধু ভক্তের কথা’ শিরোনামে প্রতিবেদন হয়েছে। তিনি অসুস্থ, চোখে ঝাপসা দেখেন, কানে কম শুনেন, তিনি নিজেকে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে মনে করছেন।

এদিকে, সাগরতীরের জেলা কক্সবাজার হতে যাচ্ছে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত। আগামীকাল মঙ্গলবার (১১ জুন) কক্সবাজার জেলাকে গৃহ ও ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন তিনি নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলার ভাদীতলার পূর্ব দরগাপাড়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পে সুবিধাভোগীদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংযুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, কক্সবাজার জেলার ৯টি উপজেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ৯২৫। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ১ম, ২য়, ৩য়, ৪র্থ এবং ৫ম পর্যায়ে (১ম ধাপ) এ পর্যন্ত মোট ৪ হাজার ৬৬৪টি পরিবারের মধ্যে গৃহ নির্মাণ করে হস্তান্তর করা হয়েছে। এই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে কক্সবাজার জেলার ৬টি উপজেলা চকরিয়া, পেকুয়া, রামু, উখিয়া, টেকনাফ ও কুতুবদিয়াকে ইতোমধ্যে ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সম্প্রতি ৫ম পর্যায়ের ২য় ধাপে কক্সবাজারের সদর উপজেলায় ৭৫টি, ঈদগাঁও উপজেলায় ১৪৬টি এবং মহেশখালী উপজেলায় ৪০টিসহ মোট ২৬১টি গৃহের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আগামী ১১ জুন নির্বাচিত উপকারভোগীদের মাঝে ঘরের দলিল ও চাবি হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী।

অপরদিকে, হতভাগা শের আলীর  কোন ভুমি নেই, এমন কি ঘরও নেই। সাবেক কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকারিয়া তার নামটি তৎসময়ে তালিকাভুক্ত করেছিলেন। তিনি বদলি হওয়ার পর এই ভুমিহীন, ঘরহীন মানুষটি মুজিব বর্ষের ঘর, তার ভাগ্যে জুটেনি। এধরনে আরও অসংখ্য মানুষ গৃহহীন, ভুমি আছে এই উপজেলায়। এই শের আলীর নামটি তালিকায় ১ নং এ ছিলো। তিনি কেনো ঘর পায়নি, ঘটনাটি অজানা। তাহলে ঈদগাঁওকে শতভাগ গৃহহীন ও ভুমিহীন মুক্ত উপজেলা ঘোষণা করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত, প্রশ্নটা থেকেই গেছে জনমনে।

এব্যাপারে ঈদগাঁও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবল চাকমা জানান, আগামীতে আরও ঘর আসলে, তিনি ঘর পাওয়া যোগ্য হলে পাবে।

 

মন্তব্য করুন