রিপন কুমার দাস, পটুয়াখালী

প্রকাশিত: ২৮ জুন, ২০২৪, ০৮:০৮ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

কাজ না করেই ২ কোটি টাকা আত্মসাৎ কৃষি কর্মকর্তার

বাউফল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাস। ছবি: সংগৃহীত

কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ না করেই ২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাসের বিরুদ্ধে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: বশির গাজী নিজেই এই অভিযোগ উত্থাপন করে জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন।

প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ না করে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে মোটা অংকের অর্থ আত্মস্মাৎ করেন কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাস। বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ মনগড়াভাবে পরিচালনা করেন তিনি। সঠিকভাবে কৃষি উপকরণ বিতরণ করেননি। কৃষকের প্রশিক্ষণের নাস্তা, খাবার ও ভাতাদি ঠিকমতো প্রদান না করে বরাদ্দকৃত টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গত ২২ এপ্রিল আউশ প্রণোদনা কার্যক্রম না করে ১ মাস পর ২৩ মে কৃষকদের মাঝে সার ও বীজ বিতরণ করেন। নির্দিষ্ট সময় সার ও বীজ বিতরণ না করায় সরকারের এই প্রকল্প কৃষকের উপকারে আসেনি। এছাড়াও মৌসুম পেরিয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন প্রণোদনা কার্যক্রম পরিচালনা করায় কৃষকরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অনাবাদী পতিত জমি ও বসতবাড়ির আঙিনায় সবজি ও পুষ্টি বাগান স্থাপন প্রকল্প থেকে ৩৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৫০ টাকা, কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ২৬ লাখ ৬১ হাজার ১১২ টাকা, পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্প থেকে ১০ লাখ ৮১ হাজার ৫০০ টাকা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, ঝালকাঠী, বরগুনা, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর কৃষক উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ৪০ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টাকা, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে উন্নতমানের ধান, গম ও পাট বীজ উৎপাদন সংরক্ষণ ও বিতরণ প্রকল্প থেকে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ১০০ টাকা, তেল জাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প থেকে ৯ লাখ ৩০ হাজার ৮০০ টাকা, রাজস্ব প্রকল্প থেকে ১৬ লাখ ৪৯ হাজার ৬০০ টাকা, সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে খামার যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্প থেকে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ টাকা, প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন এন্টারগ্রেনরশিপ অ্যান্ড রেডিয়েশন ইন বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে বরাদ্দকৃত ২৭ লাখ ৪৫ হাজার ৩১৮ টাকা, স্টেকহোল্ডার অ্যাগ্রিকালচারাল কমপিটিটিভনেস প্রকল্প (এসএসিপি) থেকে ২৯ লাখ ১০ হাজার ৪০০ টাকা এবং বাংলাদেশের চর এলাকায় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্প থেকে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৮০০ টাকার কাজ না করে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি করে মোট ২ কোটি ৪ লাখ ১৫ হাজার ২৯০ টাকা আত্মসাৎ করেন ওই কৃষি কর্মকর্তা।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ওই প্রকল্পের কোনো দৃশ্যমান কাজ বাউফল উপজেলায় নেই। কৃষি কর্মকর্তা অনিরুদ্ধ দাস বরাদ্দকৃত সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করায় সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প ভেস্তে যেতে বসেছে। কৃষক সঠিকভাবে সেবা পাচ্ছে না। কৃষি উপকরণ, প্রশিক্ষণ ও বিভিন্ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা।

সূত্র জানায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করেন অনিরুদ্ধ দাস। অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর থেকে ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনিরুদ্ধ দাসের অনিয়ম-দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। বিষয়টি যেন বাড়াবাড়ির পর্যায়ে না যায় সে জন্য লবিং-তদবিরও শুরু করেছেন তারা।

প্রকল্পের অর্থআত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করে অনিরুদ্ধ দাস বলেন, প্রকল্পের কাজগুলো যথানিয়মে করা হয়েছে। সব কাজই দৃশ্যমান। এ বিষয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ না করার জন্যও অনুরোধ করেন তিনি।

তবে অনিরুদ্ধের এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বশির গাজী বলেন, আমার জানামতে উল্লেখিত প্রকল্পের কোনো কাজই হয়নি। অর্থ আত্মসাতের জন্য অনিরুদ্ধ দাসের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।

 

মন্তব্য করুন