রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩ জুন, ২০২৪, ১১:৩৫ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

আওয়ামী লীগ বারবার ফিনিক্স পাখির মতো জেগে ওঠে: শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের প্রতিটি অর্জনের পেছনে আওয়ামী লীগের অবদান থাকলেও বারবার দলটির ওপর আঘাত এসেছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তবে এসব আঘাত আওয়ামী লীগকে কোনো ক্ষতি করতে পারেনি বলে মনে করেন তিনি। আওয়ামী লীগ বারবার ফিনিক্স পাখির মতো জেগে ওঠে বলে জানান সরকার ও দলীয় প্রধান। 

রোববার (২৩ জুন) বিকেলে ঐতিহাসিক সোহরওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বাঙালির প্রতিটি অর্জনে আওয়ামী লীগ ওৎপ্রোতভাবে জড়িত জানিয়ে দলটির সভাপতি বলেন, ‘বারবার এই দলের প্রতি আঘাত এসেছে, বারবার এই দলকে খণ্ড-বিখণ্ড করার চেষ্টা হয়েছে; বারবার দলকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করা হয়েছে। আইয়ুব খান থেকে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে, বারবার এইভাবে আঘাত এসেছে। আওয়ামী লীগ গণমানুষের সংগঠন। তাই বারবার আঘাত এসেও আওয়ামী লীগের ক্ষতি করতে পারে‌নি। ফিনিক্স পাখির মতো আওয়ামী লীগ জেগে উঠেছে। কারণ আওয়ামী লীগের শক্তি দেশের সাধারণ জনগণ। তৃণমূলের কর্মীরা, সৈনিকরা। তারা কখনো মাথানত করে না। বিভিন্ন সময় নেতারা অনেকে ভুল করেছেন। আওয়ামী লীগ ছেড়ে চলে গেছেন। যেসব নেতা ভুল করেছেন, তারা বোঝেননি। চলে যাওয়ায় হারিয়ে গেছেন। হ্যাঁ, অনেকে ফিরে এসেছেন, আমরা গ্রহণ করেছি। আবার অনেকে এখনও সরকার পতনের আন্দোলন করেন।’

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হককে স্মরণ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাঙালির সব অর্জনেই  আওয়ামী লীগ জড়িত। জন্ম থেকে আওয়ামী লীগের প্রতিটি পদক্ষেপের কারণেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সবসময় মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে ছিল সংগঠনটি। কিন্তু বারবার এই দলকে আঘাত করা হয়েছে নিশ্চিহ্নের চেষ্টা হয়েছে কিন্তু যতবার এই আঘাত এসেছে দলটি ততবারই জেগে উঠেছে।  

আওয়ামী লীগ থেকে যেসব নেতা বিভিন্ন সময় দল ছেড়ে গেছেন, তারা হারিয়ে গেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকে দলের থেকে নিজেকে বড় মনে করে দল ছেড়ে গিয়েছেন। তারা ভুল করেছেন। যেসব নেতারা ভুল করেছিলেন তারা ভুলে গিয়েছিলেন যে, তারা আলোকিত হয়েছি‌লেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে থেকেছিলেন বলেই। এখান থেকে চলে যাওয়ার পর তারা আর জ্বলেননি। নিভে গেছেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মুজিব আদর্শের সৈনিকরা কখনো পরাভব মানে না।’ এ সময় তিনি সংগঠন মজবুত করতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি তাগিদ দেন। সংগঠন মজবুত থাকলে কেউ আওয়ামী লীগকে দমাতে পারবে না বলে মনে করেন তিনি। 

শেখ হাসিনা বলেন, মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার, ২১ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস ঘোষণা, মাতৃভাষা সংরক্ষণে প্রকল্প গ্রহণ, ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি আদায় আওয়ামী লীগই এনে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি পদক্ষেপের ফলে আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময় মানুষের পাশে রয়েছে। আজ বাংলাদেশের যত অর্জন, সেগুলো আওয়ামী লীগের দ্বারাই। কিন্তু বারবার এই আওয়ামী লীগের ওপর আঘাত এসেছে। আওয়ামী লীগই গণমানুষের সংগঠন। আওয়ামী লীগ জনগণের অধিকার আদায়ের সংগঠন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেশের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছি। দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। দেশে অতিদারিদ্র্য বলে কেউ থাকবে না। দেশে কারিগরিসহ শিক্ষার উন্নয়ন ও স্মার্ট জনগণ তৈরি, খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ করতে সক্ষম হয়েছি।  

আওয়ামী লীগের নেত্রী বলেন, দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করার জন্য আমরা সবকিছু করেছি। মাছ, মুরগি, ডিম উৎপাদন, মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি করে মানুষের চাহিদা মিটাতে সক্ষম হচ্ছে।    

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের প্রতিটি অর্জনে আওয়ামী লীগের অবদান রয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলবো। আমরা আগামী ১০০ বছরের জন্য ডেল্টা প্লান তৈরি করেছি। দেশ এগিয়ে যাবে। বারবার আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা করে তারা ব্যর্থ হয়েছে।

আওয়ামী লীগের প্রতিটি পদক্ষেপের ফলে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে বলে জানান সরকারপ্রধান। এ সময় তিনি তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিবরণ তুলে ধরেন।

আলোচনায় অংশ নেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। 

এর আগে বিকেল ৩টা ৩৭ মিনিটে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশ মঞ্চে উপস্থিত হন শেখ হাসিনা। পরে দলীয় সভাপতি জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন। এরপর জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়৷ জাতীয় সঙ্গীত শেষে আওয়ামী লীগ প্রধান বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন এবং আসন গ্রহণ করেন। 

এরপর আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে বক্তৃতা শুরু করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। 

সমাবেশে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, আমন্ত্রিত অতিথিসহ দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। 

এদিকে ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সব আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয়া দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী (প্লাটিনাম জয়ন্তী) উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসেন সংগঠনটির হাজার হাজার নেতাকর্মী। এরইমধ্যে ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি।  

দুপুর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকে দেখা যায়, ঢাকার বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা বাসে চড়ে ঢাকঢোল, ব্যান্ড বাজিয়ে আনন্দ-উল্লাস করতে করতে মিছিল নিয়ে জড়ো হয়েছেন।   

এর আগে সূর্যোদয়ক্ষণে কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সকাল ৭টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে। এছাড়াও সকাল সাড়ে ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একটি প্রতিনিধিদল শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

মন্তব্য করুন