রূপালী প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৩ জুন, ২০২৪, ০৩:৩১ এ এম

অনলাইন সংস্করণ

আনার হত্যা; নজরদারিতে ঝিনাইদহ আ.লীগের চার নেতা

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। ছবি: সংগৃহীত

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের তদন্ত নতুন মোড় নিয়েছে। হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি সামনে আসার পর প্রথমে তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলেছিলেন-স্বর্ণের চোরাচালানকেন্দ্রিক বিরোধ ও লেনদেনের জেরে হত্যা করা হয়েছে তাকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেন ধোঁয়ায় মিলিয়ে গেল সেই ধারণা। হঠাৎই সামনে এলো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়। 

সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত খবর ও ডিবির সূত্র বলছে-আনার হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে গ্রেফতার ও আটক করেছে ডিবি। তাদের মধ্যে একজন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক কামাল আহমেদ বাবু ওরফে গ্যাস বাবু। এমপি আনারকে অপহরণ ও গুমের মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে তাকে। 

অপরজন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। গতকাল এমপি আনার হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে রাজধানীর ধানমণ্ডি থেকে আটক করা হয় তাকে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) স্থানীয় আওয়ামী লীগের এই নেতাকে আটক করে। 

ডিবির সূত্র জানিয়েছে-গতকাল বিকেলে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এক নেতার বাসাসংলগ্ন এলাকা থেকে সাইদুল করিম মিন্টুকে আটক করা হয়। এমপি আনোয়ারুল হত্যার ঘটনায় এর আগে গ্রেফতার ব্যক্তিদের তথ্যের ভিত্তিতে তাকে আটক করা হয়। তাকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে তার সম্পৃক্ততা মিললে তাকে মামলায় গ্রেফতার দেখানো হবে।

গোয়েন্দা পুলিশের সূত্রটি বলছে, এমপি আনোয়ারুল হত্যার পর খবর পাওয়া এবং নিজেদের মধ্যে ছবি চালাচালি করা ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের অন্তত চার নেতাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। ঘটনা জেনেও কেন তারা গোপন রেখেছিলেন, তারা কীভাবে ছবি পেলেন, হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল কি না— এসব বিষয় খতিয়ে দেখছে পুলিশ। নজরদারিতে থাকা নেতাদের দেশত্যাগে নিষেধ করা হয়েছে। তাদের যেকোনো সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হতে পারে।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ভারতের কলকাতার নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনসে মূল পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান শাহিনের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে গত ১৩ মে এমপি আনোয়ারুলকে হত্যার পর খুনিরা ছবি পাঠায় ঝিনাইদহের আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল ওরফে গ্যাস বাবুর কাছে। ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের আরও দুই শীর্ষ নেতার কাছেও সেই ছবি পাঠানো হয়। তাদের একজন সাইদুল করিম মিন্টু। অপর শীর্ষ নেতা ছাড়াও ঝিনাইদহ পৌর আওয়ামী লীগের এক নেতা ও জনপ্রতিনিধি, কেন্দ্রীয় যুবলীগের এক নেতা এবং কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা নজরদারিতে রয়েছেন। তারা এই হত্যার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার আগেই জানতেন।

তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা বলেন, হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমানের জবানবন্দিতে এবং মোবাইল ফোনে কথোপকথনের সূত্র ধরে ঝিনাইদহের আওয়ামী লীগের নেতাদের নাম আসছে। যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক আখতারুজ্জামান শাহিন ঘটনার আগে-পরে যাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তাদের বিষয়েও খোঁজ নিচ্ছে ডিবি। তারা যাতে দেশত্যাগ না করতে পারেন, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক রয়েছে।

মন্তব্য করুন