গোদাগাড়ী (রাজশাহী) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৫ মে, ২০২৪, ০৪:৪৮ পিএম

অনলাইন সংস্করণ

আসামী ভারতে, কলেজ ছাত্রকে ধরে জেলে দিল পুলিশ

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

গ্রেপ্তারী পরোয়ানার আসামীর সঙ্গে শুধুমাত্র নাম ও পিতার নামের মিল থাকায় মাদক মামলায় ইসমাইল হোসেন (২১) নামের কলেজ ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে রাজশাহীর গোদাগাড়ী মডেল থানা পুলিশ। মাতার নাম ও গ্রামের নাম আলাদা হলেও সোমবার ওই কলেজ ছাত্রকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় এসআই আতিকুর রহমান। ইসমাইল গোদাগাড়ী সরকারি উচ্চবিদ্যালয় এ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণীর মানবিক বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। ওই কলেজ ছাত্র ইসমাইল হোসেন গোদাগাড়ী পৌরসভার ফাজিলপুর গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে। তার মাতার নাম মোসা: মনোয়ারা বেগম।

অপরদিকে, মাদক মামলার গ্রেপ্তারী পরোয়ানার আসামীর নাম ইসমাইল হোসেন (২০)। সে গোদাগাড়ী পৌরসভার লালবাগ হেলিপ্যাড গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে। তার মাতার নাম মোসা: বেলিয়ারা। আসামি ইসমাইল পেশায় কাঠমিস্ত্রি। মাদক মামলায় আসামি হওয়ার পর থেকে তিনি ভারতের চেন্নাই গিয়ে কাঠমিস্ত্রির কাজ করছেন।

কলেজ ছাত্র ইসমাইল হোসেনের ভাই আবদুল হাকিম রুবেল জানান, গত রোববার (১২ মে) এশার নামাজের সময় গোদাগাড়ী মডেল থানার এসআই আতিকুর রহমান আমাদের বাড়িতে আসে। এ সময় তিনি একটি মাদক মামলার গ্রেপ্তারী পরোয়ানা দেখিয়ে আমার ভাই ইসমাইল হোসেনকে ধরে নিয়ে যান। আমরা এসআইকে বার বার বলেছি তার নামে কোনো মাদক মামলা নেই। এ সময় তার জাতীয় পরিচয়পত্রও দেখানো হয়েছে। গ্রেপ্তারী পরোয়ানার সঙ্গে গ্রাম, মাতার নাম ও বয়স মিল নেই সেটিও দেখিয়েছি। তারপরও এসআই আতিকুর রহমান জোরপূর্বক আমার ভাইকে ধরে নিয়ে যান। পরের দিন ৫০ গ্রাম হেরোইন রাখার মাদকদ্রব্য আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায়। বর্তমানে কলেজছাত্র ইসমাইল কারাগারে রয়েছেন।

মাদক মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট রাত পৌনে ১১টার দিকে গোদাগাড়ীর মাদারপুর জামে মসজিদ মার্কেটের সামনে থেকে রাজমিস্ত্রি ইসমাইল হোসেনকে ৫০ গ্রাম হেরোইনসহ গ্রেপ্তার করে রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
রাতেই তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে গোদাগাড়ী মডেল থানায় মামলা করেন ডিবির এসআই ইনামুল ইসলাম। এর পরের দিন তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। এর এক মাস পর গত ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ইসমাইল হোসেন জামিনে মুক্তি পান। এরপর তিনি ভারতের চেন্নাই চলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি তার পিতার সঙ্গে কাঠমিস্ত্রির কাজ করছেন। তার পিতা আবদুল করিম ছয় বছর ধরে চেন্নাই রয়েছেন।

পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে নাম্বার সংগ্রহ করে ইমু অ্যাপসে যোগাযোগ করা হলে নিজে মাদক মামলার আসামি কথা স্বীকার করেন গ্রেপ্তারী পরোয়ানার আসামি ইসমাইল হোসেন জানান, আমাদের মুল বাড়ি গোদাগাড়ী উপজেলার চর আড়ানিয়াদহ ইউনিয়নের দিয়ার মানিক চক গ্রামে। দুই বছর আগে আমরা লালবাগ হেলিপ্যাড গ্রামে জমি কিনে বাড়ি করেছি। এরপর থেকে আমরা সেখানে বসবাস করি। সে বলে, আমি গোদাগাড়ীতে থাকা অবস্থায় কাঠ মিন্ত্রীর কাজ করতাম। এক বন্ধুর সাথে ঝামেলা হয়। ওই বন্ধু মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ আমাকে উপজেলা পরিষদের সামনে ডেকে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তারা আমাকে ধরে নিয়ে গিয়ে ৫০ গ্রাম হেরোইন দিয়ে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠায়।

ইসমাইল বলে, আমার আগে থেকেই পাসপোর্ট করা ছিল। জামিনে মুক্তি পেয়ে ভারতের চেন্নাই চলে এসেছি। তাদের দাবিকৃত অর্থ না দেওয়ার কারণে জেলা ডিবি পুলিশ আমাকে মাদক মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দিয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
এদিকে, ভুল আসামি ধরে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় ভুক্তভোগি কলেজ ছাত্র ইসমাইলের পরিবারের পক্ষ থেকে গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি আবদুল মতিনসহ পুলিশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোন লাভ হয়নি।

সোমবার রাতে ভুক্তভোগির ভাই আবদুল হাকিম রুবেল গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নথিপত্র দেন। রাতে ভূল আসামি ধরে চালান দেওয়ার সকল নথিপত্র দেখানোর পরও সেটি মানতে নারাজ থানার ওসি আবদুল মতিন ও এসআই আতিকুর রহমান। এরপর বিষয়টি নিয়ে গোদাগাড়ী সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) সোহেল রানাকে অবগত করা হলে তিনি বিষয়টির সত্যতা যাইয়ের জন্য গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি আবদুল মতিনকে নির্দেশ দেন।

মঙ্গলবার সকালে গোদাগাড়ী মডেল থানার ওসি আবদুল মতিন বলেন, মূল আসামীর সঠিক ঠিকানা পাওয়া গেছে। যাকে ভূল করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে তার জন্য আদালতে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। আশা করছি তার জামিন হয়ে যাবে।

গোদাগাড়ী সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) সোহেল রানা বলেন, ওসিকে আমি পাঠিয়ে ঠিকানা নিশ্চিত হয়েছি। ওসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সকালে আদালতে প্রতিবেদন দিতে। এতে করে ভুলে গ্রেপ্তার কলেজ ছাত্র ছাড়া পেয়ে যাবেন। কিভাবে এ ধরণের ভুল হল বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।

মন্তব্য করুন